ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মির্জাপুরের ৫৬টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই

প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৫

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ২টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।  আর বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এসব ক্লিনিকে সরকারের দেয়া ল্যাপটপ, ট্যাব ও মডেমসহ প্রয়োজনীয় ব্যবহারযোগ্য উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।  এতে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের যেমন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি হাজার হাজার টাকার এসব যন্ত্রপাতি অকেজো হতে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়।  নির্মাণের পর সরকার জনবল, চিকিৎসক নিয়োগ ও ওষুধ সরবরাহ শুরু করে।  এরপর থেকে শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের অসহায়, দরিদ্র, দিনমজুর ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি ওজন মাপা, সুগার পরীক্ষা, উচ্চতা মাপা, নিরাপদ গর্ভধারণের জন্যে বিভিন্ন পরামর্শ, পোলিও টিকা ক্যাম্পিংসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।  দিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এ অসহায় মানুষগুলোর কাছে স্বাস্থ্যসেবার অন্যমত প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে।



ক্লিনিকগুলো আরো জনপ্রিয়, কর্মমুখি ও আধুনিক করতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ, ট্যাব ও মডেমসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে।  কিন্তু উপজেলার ৫৪টি ক্লিনিকের কোনোটিতেই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।

সরেজমিন উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের বান্দরমারা কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা গৃহিণী কুলসুম বেগম ও হাসনা বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

তারা জানান, হঠাৎ করে জ্বর দেখা দেয়।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় ৬/৭ মাইল দূরে।  তাছাড়া কুমুদিনী হাসপাতাল ৩ মাইল দূরে।  সেখানে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ আনতে গেলে দিনের অর্ধেক সময় লাগে।  একদিকে সংসারের কাজ নষ্ট অন্যদিকে সময় বেশি খরচ হয়।  কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে অল্প সময়ে ওষুধও নিলাম এবং বাড়ি গিয়ে কাজও করতে পারবো।

বাওয়ার কুমারজানি গ্রামের ফরহাদ হোসেন ফটিক বলেন, গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে সুগার পরীক্ষা করলাম। ক্লিনিকটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও পাশেই লাইনসহ বিদ্যুতের খুটি স্থাপন করা হয়েছে।  খুটি হতে প্রায় ৩০/৩৫ ফুট দুরত্বে কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।  

মির্জাপুর উপজেলার ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক হলো, মহেড়া ইউনিয়নের ভাতকুড়া, গবড়া, ডোকলাহাটি, জামুর্কী ইউনিয়নের উফুলকি, কাটরা, কড়াইল, ফতেপুর ইউনিয়নের বড়দাম, পারদিঘী, থলপাড়া, চাকলেশ্বর, মির্জাপুর পৌরসভার কান্ঠালিয়া, ত্রিমোহন, ভাওড়া, বাওয়ার কুমারজানী, বানাইল ইউনিয়নের ভূষুন্ডি, দেওড়া, গল্লী, বাংগলা, আনাইতারা ইউনিয়নের ফতেপুর, আটিয়া মামুদপুর, নগর, ওয়ার্শী ইউনিয়নের করড়া, মোস্তফাপুর, ওয়ার্শী, রোয়াইল, ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ইচাইল, বুড়িহাটি, বাগজান, বহুরিয়া ইউনিয়নের পাইখার, হাড়িয়া, ছোট গবড়া, গোহাইলবড়ী, আড়াইপাড়া, গোড়াই ইউনিয়নের বংকৈরতলা, মঈননগর, মীর দেওহাটা, কলিমাজানি, রানাশাল, বাইমাইল, আজগানা ইউনিয়নের আজগানা, তেলিনা, কুড়িপাড়া, চিতেশ্বরী, লতিফপুর, গোড়াকী, তরফপুর ইউনিয়নের তরফপুর, গাজেশ্বরী, টাকিয়া কদমা, বাঁশতৈল, বংশী নগর, বংশী নগর কাইতলা, গায়রা বেতিল, সোনালিয়া ও অভিরামপুর।



পৌর এলাকার বাওয়ার কুমারজানি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) রিংকু সাহা জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো।  মির্জাপুর সদর থেকে ক্লিনিক পর্যন্ত সম্পূর্ণ পাকা রাস্তা। সামান্য একটু কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ না থাকায় বৃষ্টির সময় কক্ষে অন্ধকার হয়।  তাছাড়া প্রচণ্ড গরমে রোগীদের সেবা দিতে অসুবিধা হয়।

মির্জাপুর ইউনিয়নের বান্দরমারা (বর্তমানে লতিফপুর ইউনিয়ন) কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) খালেদা আক্তার জানান, ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকারের লক্ষ্য সঠিকভাবে অর্জিত হবে। তাছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য টিএসও স্যারের মাধ্যমে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে সংযোগ পাওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

বান্দরমারা কমিউনিটি ক্লিনিকের জমিদাতা বানেজ খান বলেন, ক্লিনিক নির্মাণ করতে তিনি তার বসত বাড়ির পাশ থেকে ৫ শতাংশ জমি দিয়েছেন। ক্লিনিক ও তার বাড়িতে একটি খুটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে বিদ্যুৎ অফিস তাকে জানিয়েছেন।

পৌর এলাকার কান্ঠালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) ফারহানা হক আশা বলেন, ৫৪টি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের একটি করে ল্যাপটপ ও মডেম দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সরকারের দেওয়া যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অসুবিধা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

কান্ঠালিয়া ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিল্পী আক্তার, জরিনা বেগম ও বাসনা বসু বলেন, জ্বর ও ঠান্ডা জনিত রোগে ক্লিনিকে এসেছিলাম।  ২ টাকার বিনিময়ে ডাক্তার দেখিয়ে বিনামূল্যে ওষুধ নিলাম।  সদরে ডাক্তার দেখাতে গেলে কমপক্ষে একেক জনের ৫/৬শ টাকা করে খরচ হতো।

লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।  অন্যদিকে ক্লিনিকগুলোতে সেবা নিতে আসা মানুষদের সাধারণত গরমের সময় দীর্ঘ সময় বসে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  এছাড়াও বর্ষার দিনে মেঘলা থাকায় এবং শীত মৌসুমে ক্লিনিকের ঘরগুলো অন্ধকার হয়ে যায়।



আওয়ামী লীগ সরকার যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে তা বিদ্যুতের অভাবে বেশ কিছুটা ব্যহত হচ্ছে।  তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীর কাছে স্বাস্থ্য বিভাগের বিদ্যুৎ বিহীন সকল প্রতিষ্ঠানে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার দাবি জানান।

এছাড়া মির্জাপুর উপজেলায় ১৩টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ভাদগ্রাম ও তরফপুর ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভাদগ্রাম ও তরফপুর ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উপজেলার ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কোনোটিতেই বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিকুর রহমান জানান, ৫৪টি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের ল্যাপটপ ও মডেম এবং হেলথ অ্যাসিস্টেন্টদের সরকারের পক্ষ থেকে ট্যাব দেওয়া হয়েছে।  কোনো কোনো ক্লিনিকের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন চলে গেছে কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করা হয়েছে। তাছাড়া সরকার ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুত সংযোগ নিতে কোনো বরাদ্ধ দেননি।

মির্জাপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সুশান্ত রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় হতে আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই।  খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এমএএস/পিআর