কৃষিবিদ থেকে কৃষিমন্ত্রী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভের পর মহাজোট সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে তিনি নবম জাতীয় সংসদে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সদ্য বিলুপ্ত ১০ম সংসদের এমপি হিসেবে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ফের ড. আব্দুর রাজ্জাককে মন্ত্রী করায় আনন্দের বন্যা বইছে টাঙ্গাইলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল- ১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে বড় ড. আব্দুর রাজ্জাক। রাজনৈতিক কোনো পরিবারে জন্মগ্রহণ না করলেও ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুসারী ছিলেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে ছাত্রাবস্থায় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন তিনি।
পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাতে কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় গঠিত পাক সেনাদের অস্থায়ী ক্যাম্প দখল নিয়ে এ জেলায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ জেলাকে স্বাধীন ও পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পারিবারিক দাবির মুখে রাজনীতির পরিবর্তে সরকারি চাকরিতে যোগদান করাসহ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দেশের প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে কর্মক্ষেত্রেও যথাযথ যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। এক ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় অধ্যায়নরত এবং সহধর্মিনী শিরিনা আক্তার ভানু ঢাকার একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনা পেশায় রয়েছেন।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে আসেন নতুন মুখ। ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের মৃত্যুতে বিএনপির মনোনয়ন পান তারেক রহমানের সহযোগী ব্যবসায়ী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তৎকালীন বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল গফুর মন্টু মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক। ওই নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক নৌকা) ৯৮ হাজার ৪১৩ ভোট পেয়ে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপির ফকির মাহবুব আনাম স্বপন (ধানের শীষ) পান ৪০ হাজার ৯৭২ ভোট অপরদিকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল গফুর মন্ট পান ৫৩ হাজার ৫৩৯ ভোট।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক (নৌকা) প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে (ধানের শীষ) পরাজিত করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুর রাজ্জাক বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়ে ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশনের দলের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ড. রাজ্জাক এবার নৌকা প্রতীকে প্রায় পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামানত হারিয়েছেন।
মধুপুর-ধনবাড়ী তথা টাঙ্গাইলের মানুষ ড. আব্দুর রাজ্জাককে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দশম সংসদ নির্বাচনেরর পর তাকে মন্ত্রিত্ব না দিলেও তিনি আগের মতই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। তিনি গ্রামে-গ্রামে বিদ্যুৎসহ মধুপুর-ধনবাড়ীতে শতভাগ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। টানা চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকে মন্ত্রী করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মধুপুর ও ধনবাড়ীবাসী।
ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন ও দপ্তর সম্পাদক ইকবাল হোসেন তালুকদার বলেন, মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তিনি। ড. আব্দুর রাজ্জাককে ফের মন্ত্রী করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
নতুন সরকারের কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মন্ত্রী পরিষদে স্থান দিয়ে আমাকে সর্বোচ্চ সম্মানিত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সততা, নিষ্ঠা ও কাজের মূল্যায়নে তিনি আমাকে এ দায়িত্ব প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এ দায়িত্ব পালনে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
আরিফ উর রহমান টগর/আরএআর/এমকেএইচ