সুবর্ণচরে গণধর্ষণ : রুহুল আমিনকে আ. লীগ থেকে বহিষ্কার
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলার বেচু ব্যাগা গ্রামের আবু কাশেমের ছেলে।
শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) রাতে জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে রুহুল আমিন মেম্বারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরজুবলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হানিফ চৌধুরী, সহ-সভাপতি ছানাউল্যা বিকম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল বাসার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর (রোববার) সকালে ভোট দিতে গেলে কয়েকজন সমর্থক নির্যাতিত গৃহবধূকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলে। তিনি তখন ধানের শীষে ভোট দেয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় তারা তাকে ‘তোর কপালে শনি আছে’বলে হুমকি দেয়। পরে কেন্দ্র থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান গৃহবধূ।
এরপর রাত ১২টার দিকে একই এলাকার ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে এসে প্রথমে বসতঘর ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে (১২) বেঁধে রেখে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে।
তারা তাকে গলা কেটে হত্যা করতে যায়। এ সময় প্রাণভিক্ষা চাইলে তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির উঠান সংলগ্ন পুকুর ঘাটে ফেলে রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাত ৯টায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
শুরু থেকে এ ঘটনার পেছনে চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রহুল আমিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাকে বাদ দিয়ে সোহেলকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয় চরজাব্বার থানায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে শুরু থেকে পুলিশের বক্তব্য ছিল রুহুল আমিনকে যেহেতু আসামি করা হয়নি সেহেতু তাকে গ্রেফতারের সুযোগ নেই।
এদিকে বুধবার বিকেলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী ও তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন।
পরবর্তীতে ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের জানান, অপরাধী যত বড় নেতা হোক না কেন অথবা শক্তিশালী হোক তাকে আইনের আওতায় আনা তাদের একমাত্র কাজ।
এ সময় আলোচিত রুহুল আমিন মেম্বারের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তদন্তে যদি তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে এজাহারের বাইরেও তাকে আসামি করে গ্রেফতার করা হবে।
ডিআইজির এ কথার পরপরই বুধবার রাতে পুলিশ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া সেনবাগের একটি ইটভাটা থেকে এজাহারভুক্ত আসামি বেচুকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় এজাহারে থাকা ৯ জনের মধ্যে মূলহোতা রুহুল আমিনসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এনডিএস