সিলেটে রাজনের পর আরেক শিশুকে হত্যার অভিযোগ
বহুল আলোচিত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যার ৪২ দিনের মাথায় সিলেট শহরতলির ঘোপালে আরো এক শিশু শ্রমিক মো. আকমল হোসেনকে (১১) নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ঘোপালস্থ ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন শৌচাগারে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় আকমলকে।
নিহত আকমল সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার পাহাড়পুর (পূর্ব রাজনপুর) গ্রামের দিনমজুর মো. এখলাছ মিয়ার পুত্র। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে নিহত আকমলের বাবা এখলাছ মিয়া বাদী হয়ে দু’জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনকে আসামি করে এসএমপির জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৩।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন শহরতলির টুকেরবাজার ঘোপাল এলাকার লন্ডনি বাড়ি ও ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির মালিক মো. ওহাব আলী (৫৫) ও গোলাপগঞ্জ থানার ফুলসাঈন গ্রামের মৃত হাসিবের পুত্র বর্তমানে ঘোপাল ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির মিস্ত্রি আব্দুর রহমান (৪০)। কিন্তু দু’দিনেও ওই ফ্যাক্টরির মালিক ও মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে মামলাটির তদন্ত চলছে।
গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শিশু আকমল হোসেনকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার নামাজের জানাযা শেষে শিশু আকমলের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকমল তৃতীয়।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার এলাকার ঘোপালস্থ ফুড মার্ক ব্রেড অ্যাড বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে শিশু আকমল হোসেন দুই বছর ধরে ১৩০০ টাকা বেতনে কাজ করে আসছিল। ঘটনার ৫/৬ দিন পূর্বে ফ্যাক্টরির মালিক মো. ওহাব আলী ও মিস্ত্রি আব্দুর রহমানের কাছে আকমলের বাবা এখলাছ মিয়া বকেয়া বেতনের টাকা চাইতে গেলে তাদের সঙ্গে তার মনোমানিল্য সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে মালিক ওহাব ও মিস্ত্রি আবদুল রহমান শিশু আকমল হোসেনকে নির্যাতন করে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওহাব ও আবদুর রহমান ফ্যাক্টরির শৌচাগারে নিয়ে আকমলকে ওয়ালের সঙ্গে ঢুস মেরে ইটের টুকরো দিয়ে মাথা তেঁতলে দিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে।
নির্যাতনে আকমলের প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে অবস্থা বেগতি দেখে দুর্বৃত্তরা দ্রুত তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন পুলিশ হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদেন্তর জন্য মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত শিশুর বাবা এখলাছুর রহমান শনিবার রাতে জাগো নিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে তার ছেলে আকমলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান ছেলের মাথা তেঁতলানো, মুখমণ্ডলের ডান পাশে ফুলা ও কান ও নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
এখলাছ অভিযোগ করেন, ছেলের বকেয়া বেতন চাওয়ায় ফ্যাক্টরির মালিক ওহাব ও তার সহযোগিরা তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি তার বিচার চাই।
মামলার জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, দেয়ালে চাপা পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তবে মামলাটির আসল রহস্য উদঘানের জন্য তদন্ত চলছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের তৎপর রয়েছে পুলিশ।
ছামির মাহমুদ/বিএ