বরিশালের ৬ আসনের অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারা দেশের সঙ্গে একযোগে বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮৫ এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ৮২ হাজার ৪৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮০৫টি। এর মধ্যে ৪৬৩ টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
বেশিরভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভোটারদের মনেও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য প্রশাসন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে ৬০০ সেনা সদস্য। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন। এ ছাড়া তৎপর রয়েছে পুলিশ সদস্যরা।
বরিশাল জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জানান নুরুল আলম জানান, জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ৮০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪৬৩ টিকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এর মধ্যে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৯ হাজার ৪২৮ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২৮ হাজার ৬০৬ জন। ভোটকেন্দ্র ১১৫। ভোটকক্ষ ৫৭৮টি। এই আসনে ১১৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৭ অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে ১৩৬ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টি, বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে ১২৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৯টি, বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে ১৪৮ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টি, বরিশাল-৫ (সদর-মহানগর ) আসনে ১৭৪ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৩টি এবং বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে ১০৯ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯২টির অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরীতে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য মোটরযানের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরীর তিনটি প্রবেশ মুখে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নগরীর ভেতরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সার্বক্ষণিক চেকপোস্ট বসিয়ে যানবহনে নজরদারি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে আবাসিক হোটেলগুলোতে চালানো হচ্ছে তল্লাশি অভিযান।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক জানান, মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে থাকবেন ১ হাজার ১৫০ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য। প্রতিটি কেন্দ্রে ১ থেকে ২ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য, ১৫ জন আনসার সদস্য এবং একজন করে গ্রাম পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত প্রতিটি কেন্দ্রে ২ থেকে ৩ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য, ১৫ জন আনসার সদস্য এবং একজন করে গ্রাম পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া ১০০ জন আর্মড পুলিশ সদস্যসহ বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ভোটকেন্দ্র ও চারপাশের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে সেনা সদস্যরা।
জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের লক্ষে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের আওতাধীন ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে থাকবেন ১ হাজার ৯০০ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য। আনসার সদস্য রয়েছেন ৫ হাজার। প্রতিটি কেন্দ্রে ১ থেকে ৩ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য , ১২ জন আনসার সদস্য এবং একজন করে গ্রাম পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ভোটকেন্দ্র ও চারপাশের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০০ জন সেনা সদস্যরা থাকছেন। আপদকালীন সমস্যা দেখা দিলে তারা জরুরি ভিত্তিতে সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেবে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন তা-ই করা হবে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার।
সাইফ আমীন/এসআর