আমরা মাথা নত করব না : মির্জা ফখরুল
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেব, আমরা মাথা নত করব না। জনগণ যদি জেগে উঠে তাহলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না। আমরা এদেশের মানুষ, আমাদের অধিকার আমাদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাঁড়ান তাহলে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
বুধবার বিকেলে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কারাবন্দি মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার ফুলতলী মিনি স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনে ধানের শীষ জয়ী না হলে দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। তাই আমরা দেশের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নির্বাচনে গিয়েছি। নির্বাচনে ধানের শীষ জয়ী না হলে দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা যাবে না। ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীসহ দেশের কারাবন্দি নেতাকর্মীরা মুক্তি পাবে না। জনগণকে আজ সংগঠিত হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কামান-ট্যাংক দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি, এখন স্বাধীন দেশে সরকার চাইছে জনগণকে দমিয়ে রাখতে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ জেগে উঠেছে। এদেশের মালিক আপনারা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়। তাই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়াসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর মুক্তির জন্য আপনাদের কাছে একটা ভোট ভিক্ষা চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার মিথ্যা ও ভৌতিক মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে রেখেছে। গুম-খুন নির্যাতন ও মামলা হামলায় কোটি মানুষের চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে আজ বাংলাদেশ। তাই আপনাদের যতই বিপদ আসুক, যতই ভয় দেখাক আর যতই হুমকি ধমকি দিক আপনারা মাঠ ছেড়ে যাবেন না। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ জেগে উঠেছে, দাবি উঠেছে এ সরকার আমরা চাই না, পরিবর্তন চাই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারা অত্যাচার করছে, গ্রেফতার করে হাত-পা ভেঙে দিচ্ছে, গুলি করছে। এ নির্যাতন বন্ধ করুন, জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিন। এ সময় নাঙ্গলকোট থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের একজন কমিশনার বলছেন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন কমিশনার কথা মিথ্যা বলেছেন। কমিশনে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কাজ হয় না, ইসি এখন অসহায়, বধির।
ইশতেহার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে বেকার ভাতা, বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে কৃষকদের সার দেয়া হবে।
দলের কারাবন্দী প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফুরী, সামছুদ্দিন দিদার, দলের জেলা ও স্থানীয় নেতা শফিকুজ্জামান মজুমদার, মাহবুব চৌধুরী, আবুল বাসার, ইসমাইল হোসেন মজুমদার প্রমুখ।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর এদেশের মানুষের মুক্তির দিন। শেখ হাসিনা একটি ভোটের জন্য মানুষ মারে। একাত্তরে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে আমরা জয়ী হয়েছিলাম, ৩০ ডিসেম্বরও আমাদের গণতন্ত্রের জয় হবে।
পুলিশের গ্রেফতার নির্যাতনের কথা বলে তিনি বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। সরকার ভয় পেয়ে গেছে, তাই রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি এ ধরণের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, একাত্তর দেখিনি, ২০১৮ দেখেছি। গণতন্ত্র মানে কি হাত-পা ভেঙে দেয়া, রাতের অন্ধকারে মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেড়ে নেয়া? আমরা আজ গণতন্ত্র আর মানবতার মুক্তির সংগ্রাম করছি। ৩০ তারিখে আমরা বুলেটকে ভয় পাবো না, ধানের শীষের জন্য কেন্দ্র পাহারা দেব।
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র, বেগম খালেদা জিয়া ও আমার বাবাসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য সকল প্রকার ভয়কে জয় করে কেন্দ্রে যাবেন, আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। ৩০ তারিখের নির্বাচনে আপনারা আমার বাবাকে একটি ভোট দিয়ে মুক্ত করবেন, আমরা বাবাকে পাঁচ বছরের জন্য আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দেব।
কামাল উদ্দিন/আরএআর/জেআইএম