নড়াইলের সবাই যেন মাশরাফির নির্বাচনী কর্মী
জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্য এবার নড়াইলে ব্যাতিক্রমী নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। শুধুমাত্র মাশরাফি নির্বাচন করছেন বলেই সকল শ্রেণিপেশার মানুষ যার যার নিজ খরচে নির্বাচনী সামগ্রী তৈরিসহ প্রচারণার সকল ব্যয়ভার বহন করছেন।
নড়াইল জেলা ক্রিড়া সংস্থার অধীনস্থ ৬৮টি স্পোর্টস ক্লাবের কর্মকর্তা কর্মচারিরা নিজ নিজ খরচে বিভিন্ন এলাকায় মাশরাফির পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে নৌকা মার্কার মনোনয়ন দিয়ে যেমনি নড়াইলকে সম্মান দিয়েছেন তেমনি ক্রিড়াঙ্গনকেও সম্মানিত করেছেন। তাই জেলা ক্রিড়া সংস্থার অধীনে যতগুলো স্পোর্টস ক্লাব আছে তাদের সকলকে মাশরাফিকে বিজয়ী করার জন্য সবধরনের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সকল ক্লাবের সদস্যরা নিজ খরচে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছে।
নড়াইল কাঁচা বাজারের ছোট্ট একটি হোটেল খান জাহান আলী। হোটেলটির মালিক ইসহাক হোসেন। ইসহাক সকালে হোটেলের কাস্টমার সামলে ৯টা থেকে শুরু করেছেন মাশরাফির জন্য নৌকা তৈরির কাজ। দোকানের তিনজন কর্মচারী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মাশরাফির নির্বাচনী প্রচারণায়। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নৌকার কাঠামো বানিয়ে তাতে সেলাই করে লাল-সবুজ কাপড় বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট নৌকা।
এরকম ছোট ছোট নৌকা তৈরি করে তা বিভিন্ন স্থানে প্রচারের জন্য রেখে দেয়া হবে। মাশরাফির ভক্ত এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসহাক হোসেন বলেন, আমাদের বস মাশরাফি নৌকা মার্কা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সুযোগ আর পাব না, ব্যবসা-টাকা এগুলো বেঁচে থাকলে পরেও পাওয়া যাবে।
ইসহাকের মতো সবজি বিক্রেতা মোবারক, মুদি দোকানি সাঈদ, কসমেটিক বিক্রেতা মিশন ব্যবসা কমিয়ে এখন শুধুই মাশরাফির জন্য ভোটের মাঠে।
মহিষখোলা কাঁচাবাজারের আরেক ফল বিক্রেতা মন্নু মোল্যা ব্যবসার সময় কিমিয়ে নিয়ে সারাদিন মাশরাফির লিফলেট বিলি করছেন পাড়ায়-মহল্লায় আর বাসস্ট্যান্ডে। মাশরাফিপাগল এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাউকে দেখলেই ভোট চেয়ে একটি করে ফল খাওয়াচ্ছেন।
মাশরাফির পরিবার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী হয়তো জানেনই না নিজের অর্থে কীভাবে নেমে পড়েছেন এলাকার গরিব, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। জেলা ইজিবাইক শ্রমিক সমিতির সভাপতি লায়েব আলী একটি মোটরসাইকেলে নিজ খরচে নৌকা মার্কা স্থাপন করে তাতে লাইট জ্বালিয়ে সারাদির ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, এলাকার সকল ইজিবাইক চালক মাশরাফির জন্য পাগল হয়ে গেছে, তারা নিজ নিজ খরচে মাশরাফির প্রচার চালাচ্ছে। আমাদের সোনার ছেলের জন্য করবো না তো কার জন্য করবো।
পিছিয়ে নেই অন্য ব্যবসায়ীরাও। নিজেদের অর্থ ব্যয় করে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা। প্রচারের ব্যানারে তাদের নাম কিংবা ছবি শোভা পাচ্ছে কিন্তু গরিব খেটে খাওয়া মানুষের নিভৃতে নিঃস্বার্থভাবে মাশরাফির জন্য ভালোবাসা দেখে এলাকার ছেলে-বুড়ো সকলেই মাঠে নেমে পড়েছেন।
হাফিজুল নিলু/এফএ/পিআর