কিছুই নেই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর
মহাজোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর নেই বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দালান, দোকান এমনকি কোনো বাণিজ্যিক ভবন। এছাড়াও ব্যবসা থেকেও নেই তার কোনো বাৎসরিক আয়।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমাকৃত মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরপুর হলফনামাটি জমা দিয়েছেন তিনি। যদিও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারই দেয়া হলফনামায় ছিল ব্যবসা থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা আয়। এ ছাড়া শিক্ষকতা, লেখক সম্মানী থেকে বাৎসরিক ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য (ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ) ১৪ হাজার ৬৩৯ টাকা আয়সহ নিজ নামে ছিল নগদ ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৭ টাকা।
এছাড়াও ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৯ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৯ টাকা। তবে তার স্ত্রী ও ছেলের নামে ছিল না কোনো নগদ টাকা। ওই হলফনামায় ছিল তার এমপি কোটা থেকে নেয়া একটি টয়োটা জিপ গাড়ি। যার মূল্য ৬৫ লাখ টাকা।
১৯৭৩ সালে বৈবাহিক সূত্রে প্রাপ্ত উপহার হিসেবে তার স্ত্রীর ছিল ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। যার মূল্য নির্ধারণ ছিল ১০ হাজার টাকা। এ ব্যতিত ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে ছিল ফ্রিজ ও টিভি। যার মূল্য ৭৫ হাজার টাকা। আসবাবপত্রের মধ্যে ছিল সোফা সেট, একটি খাট, ২টি ড্রেসিং ও ডাইনিং টেবিল। যার মূল্য ছিল ৫০ হাজার টাকা। তবে ওই হলফনামায় লতিফ সিদ্দিকীর চেয়ে তার স্ত্রীর নামে জমি ছিল বেশি। যদিও ১৯৯০ সালে তার নিজ নামে জমি ছিল ৩৯ শতাংশ। যে জমির মূল্য ছিল ৩২ হাজার টাকা। যদিও তৎকালীন সময়ে তার স্ত্রীর নামে জমি ছিল ৫ দশমিক ২৮ একর। যার মূল্য ছিল ২ কোটি টাকা। অকৃষি জমি এবং অর্জনকালীন ১ একর ৮৭ শতাংশ জমি রয়েছে। যার মূল্য ৬৫ লাখ টাকা। তবে লতিফ সিদ্দিকীর দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক কোনো ভবন না থাকলেও তার স্ত্রীর নামে একটি এবং অপর একটি নির্মাণাধীন ভবন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের পর তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান তিনি। ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন সংগঠন লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে ২২টি মামলা হয়। পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। একপর্যায়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারান এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরিফ উর রহমান টগর/এমএএস/এমএস