জাপার ৪ এমপির অঢেল টাকা, তবুও ঋণগ্রস্ত
বগুড়ায় জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত চার সংসদ সদস্য গত ৫ বছরে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিজের নামে এমনকি স্ত্রীর নামে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। এছাড়াও বেড়েছে আয় ও ব্যাংক ব্যালেন্স। হাতে রয়েছে অঢেল নগদ টাকা। কিনেছেন দামি গাড়ি, আগ্নেয়াস্ত্র।
এত কিছু থাকার পরও তারা ঋণগ্রস্ত। ব্যাংকে তাদের নামে ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে আলতাফ আলীর বাড়ি-গাড়ি থাকলেও হলফনামায় কিছুই লেখা হয়নি। ১০ বছরে তিনি অনেক গরিব হয়েছেন।
এই সংসদ সদস্যরা হলেন- বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নূরুল ইসলাম ওমর ও বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনের অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলতাফ আলী। এদের মধ্যে তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং আলতাফ আলী নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হন।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই চারজনই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বগুড়া-৭ আসনে আলতাফ আলীর সঙ্গে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টুকেও রাখা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বগুড়-২ (শিবগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর কৃষি, বাড়ি ভাড়া এবং ব্যবসা থেকে তার আয় ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৮ সালে ২৮ নভেম্বর দাখিল করা হলফনামাতে তিনি ওই তিনটি খাতে আয় একই দেখিয়েছেন। কমেছে নগদ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এবার তা কমে হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নগদ টাকা ১ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে দেড় লাখ। অবশ্য আগে ব্যাংকে কোনো টাকা জমা না থাকলেও এখন তার নামে জমা আছে ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকা।
৫ বছর আগে শুধু স্ত্রীর নামে একটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি থাকলেও এখন সেটিও নেই। তবে নিজের জন্য ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯১ টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার কার কিনেছেন। আগে আগ্নেয়াস্ত্র না থাকলেও এখন তিনি একটি পিস্তল এবং একটি মিনি রাইফেলের মালিক। যার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র কিনলেও ৫ বছরে টিনসেড কাঁচা-পাকা বাড়ির কোনো রকম পরিবর্তন হয়নি। স্বামী- স্ত্রী দুইজনের নামেই ৭০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার আগেই ছিল, এখনও তাই আছে। ইলেক্ট্রনিক পণ্য নিজের নামে ৭০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার, দুজনের নামে ১ লাখ ৩৫ হাজার আসবাবপত্র রয়েছে। তবে ৫ বছরের ব্যবধানে তিনি ব্যাংক থেকে ব্যবসা এবং মোটরকার কেনার জন্য ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৪২ টাকা ঋণ করেছেন।
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাচিয়া) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম তালুকদারের আয় বেড়েছে। পাচঁ বছর আগেও তিনি কৃষি খাত এবং আইন পেশা থেকে আয় করতেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে ওই দুটি খাতের পাশাপাশি সংসদ সদস্য হিসেবে তার আয় বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে তার নগদ টাকার পরিমাণ পনেরো গুণ বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। তবে ব্যাংকে জমা করা টাকার পরিমাণ ২ লাখ থেকে নেমে এসেছে ১ লাখ।
বর্তমান ৩৫ লাখ টাকার মালিক নূরুল ইসলাম তালুকদার ৪২ লাখ টাকা দামের ১টি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। অবশ্য আয় এবং সম্পদ বাড়ানোর পাশাপাশি তিনি গৃহ নির্মাণের জন্য ৮০ লাখ টাকার ঋণও করেছেন।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাংসদ নূরুল ইসলাম ওমর পাঁচ বছর আগে কৃষি খাত ও ব্যবসা থেকে প্রায় চার লাখ টাকা আয় করতেন। বর্তমানে ওই দুটি খাতে তার কোনো আয় নেই। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দাখিল করা হলফনামায় তিনি নিজেকে ঠিকাদার পরিচয় দিলেও এবার তিনি পেশা পরিবর্তন করে হয়েছেন সংসদ সদস্য। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ নূরুল ইসলাম ওমরের অবশ্য পাঁচ বছরের ব্যবধানে নগদ প্রায় ৮ লাখ টাকা বেড়েছে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার নগদ ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৪ টাকা ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ টাকা। তবে আগে তার স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা থাকলেও এখন তার হাতে নগদ কোনো টাকাই নেই। স্থাবর সম্পদ প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও পাঁচ বছরে ব্যাংক ঋণের অংক কমাতে পেরেছেন নূরুল ইসলাম ওমর। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে তার ঋণের পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকা। বর্তমানে তার ঋণের পরিমাণ ৬১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৬ টাকা।
বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলতাফ আলীর আয় পাঁচ বছরে প্রায় তিনগুণ (৭লাখ ১০ হাজার টাকা) বাড়লেও তার নিজের এবং নির্ভরশীলদের হাতে নগদ টাকা নেই। এমন কি ব্যাংকেও তার কোনো টাকা জমা নেই। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার কাছে নগদ ১ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে ছিল আরও ২ লাখ টাকা। শুধু কি তাই, আগে স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের নামে যে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল এখন সেটিও আর নেই বলে এবারে দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। অবশ্য স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের না থাকলেও নিজের ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও বগুড়া শহরের শিববাটি শাহী মসজিদ লেন এলাকায় ৮ শতক জায়গার ওপর তার রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। গাবতলী উপজেলার টিওরপাড়া গ্রামে রয়েছে ৬ শতক জায়গার ওপর টিনশেডের একটি আধাপাকা বাড়ি। রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ও নিজের কেনা প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমি।
২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তিনি দুটি বাড়ি ও ২০ বিঘা আবাদি জমির থাকার কথা উল্লেখ করলেও এবারের হলফনামায় নিজের স্থাবর সম্পদ বলতে একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যগুলো নেই। এখানেই শেষ নয়, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রও কমেছে তার। পাঁচ বছর আগে তার বাড়ির ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্য ছিল ৩ লাখ টাকা কিন্তু এখন তার দাম কমে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা। এই সংসদ সদস্য পাঁচ বছরের ব্যবধানে একটি বাড়ি করলেও তার মূল্য জানাতে চাননি, এমনকি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েও তিনি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার ঋণ করেছেন।
লিমন বাসার/আরএআর/পিআর