প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দেনা এক কোটি ১৮ লাখ টাকা
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ছয়টি আসনের দুটিতে নতুন প্রার্থী দিয়েছে দলটি। অন্যগুলোতে বর্তমান সংসদ সদস্যদের ওপরই আস্তা রেখেছে আওয়ামী লীগ।
গত ২৮ নভেম্বর যারা দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের প্রায় সবারই স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। তবে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এক কোটি ১৮ লাখ টাকা দেনা রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে উল্লেখ করা প্রার্থীদের হলফনামা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। হলফনামায় তিনি ব্যাংক ঋণ ৮৩ লাখ এবং ব্যক্তিগত ঋণ ৩৫ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। বাৎসরিক আয় হিসেবে তিনি কৃষি খাত থেকে ৮০ হাজার, ইটভাটা থেকে ৮ লাখ ৬৩ হাজার এবং মন্ত্রী-ভাতা হিসেবে ১১ লাখ ৮১ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া তার কাছে নগদ হিসাবে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার, ৬০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র, আলমারি, পালঙ্ক, চেয়ার, টেবিলসহ দুটি পুরনো জিপ ও একটি পুরনো মোটরবাইক রয়েছে। তার নামে কোনো স্বর্ণ বা সঞ্চয়পত্র কেনা না থাকলেও স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ উপহার হিসেবে দেখিয়েছেন। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তিনি দুটি জমির মূল্য দেখিয়েছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। পাশাপাশি তার একটি বিল্ডিং ও একটি টিনশেড সেমিপাকা বাড়ি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। পেশা কৃষিকাজ। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য। ঢাকা ও খুলনায় তার দুটি বাড়ি রয়েছে। নগদ টাকা রয়েছে ৩৩ লাখ। বিভিন্ন যানবাহনের অর্জনকালীন মূল্য ৫০ লাখ, স্বর্ণ ৭ লাখ, আসবাবপত্র রয়েছে ৭ লাখ ও ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র রয়েছে ৭ লাখ টাকার।
বাৎসরিক আয় হিসেবে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, কৃষি খাত থেকে ৭০ হাজার টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া ৫ লাখ ১২ হাজার, বেতন ও সম্মানি বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার এবং অন্যান্য আয় ১ লাখ ৪১ হাজার। তার কোনো মামলা এবং দায় নেই। ব্যাংকেও কোনো টাকা জমা নেই।
খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ সালাউদ্দিন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস হলেও তার হলফনামা দেখে সহজেই বোঝা যায় তিনি সফল ব্যবসায়ী। মেসার্স আজমীর নেভিগেশন ও মেসার্স ফারদিন ফিসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। হলফনামায় প্রার্থীর বাৎসরিক আয় উল্লেখ করা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং তার স্ত্রীর ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এছাড়া প্রার্থীর অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তি উল্লেখ করা হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পাশাপাশি তার স্ত্রীসহ প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের নামে অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের কাছে ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার দায় রয়েছে তার।
খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসন থেকে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (সম্মান)। তিনি গত দুই সংসদ নির্বাচনে টানা এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। হলফনামায় তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া বাড়ি ভাড়া বাবদ বাৎসরিক ১ লাখ, রাখিমালের ব্যবসা বাবদ ২৪ হাজার, সংসদ সদস্যের ভাতা ৭ লাখ ২৫ হাজার, অন্যান্য ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার এবং মৎস্যচাষ থেকে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয় করেন। তার কাছে নগদ রয়েছে ৫১ লাখ টাকা। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ করেছেন ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ৪০ তোলা স্বর্ণ, ফ্রিজ, টিভি, খাটসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ও উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
দৌলতপুরে ৩ কাঠা জমি, রাজউকে ৫ কাঠা, রেলগেটে ৮ শতক ও বিল ডাকাতিয়ায় ৪৯ শতক জমির আনুমানিক মূল্য দেখিয়েছেন ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে তিনি মহেশ্বরপাশায় সাড়ে ১১ শতক জমির ওপর ১টি তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি দেখালেও তার মূল্য উল্লেখ করেননি।
খুলনা-৪ (দিঘলিয়া-রূপসা-তেরখাদা) আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম মুর্শেদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। তিনি প্রাইভেট/পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বস্ত্রশিল্প, ব্যাংক ও হাসপাতলের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
হলফনামার তথ্য অনুসারে তার বাৎসরিক আয় ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৮৩ কোটি ৫৬ লাখ এবং স্থাবর সম্পদ ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। কোনো ব্যাংকে তার ঋণ না থাকলেও বিভিন্ন দায় রয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার।
সালাম মুর্শেদী বাৎসরিক হিসেবে বাড়ি ভাড়া বাবদ ১৬ লাখ ৪২ হাজার, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বেতন ২ কোটি ৬২ লাখ এবং শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তার কাছে নগদ অর্থ রয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৫ লাখ, বন্ড, সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৭১ কোটি টাকার, স্বর্ণ সাড়ে ৪ লাখ টাকার, ইলেকট্রনিক্স সাড়ে ৭ লাখ টাকার, আসবাবপত্র ৯ লাখ ৮০ হাজারসহ অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার।
পাশাপাশি স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গুলশানে ১৫ কাঠা জমি, খিলগাঁওয়ে একটি ৯০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশানে দুটি ফ্ল্যাটসহ দালানকোঠা ও আবাসিক ভবন বাবদ আর্থিক মূল্য দেখিয়েছেন ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলেও তিনি ঠিকাদারি ও কৃষিকাজে সফল। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ, ব্যাংকে জমা ৪ লাখ ৫৫ হাজার, উপহার হিসেবে স্বর্ণ পেয়েছেন ৩০ তোলা।
ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র রয়েছে ১ লাখ টাকার, আসবাবপত্রও ১ লাখ টাকার। কোনো ডিপিএস নেই। কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক আয় ৩২ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৬৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
কৃষিজমির পরিমাণ ও অর্জনকালীন আর্থিক মূল্য ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। ঠিকাদারি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাইম ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া আছে ১ কোটি টাকা।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/পিআর