ডামির ভিড়ে আসল তারা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনে ২৩ জনকে দলের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। গত বুধবার (২৮ নভেম্বর) মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে ২৩ জন প্রার্থীই সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীকেই ‘ডামি প্রার্থী’ মনে করছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দলের ‘আসল প্রার্থী’ নিয়েও কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনে দলের মনোনয়ন পেতে মাঠে নামেন বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেন্দ্রে দৌঁড়ঝাপ আরও বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত প্রতি আসনেই একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন ছাড়া সবকটি আসনেই একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামান বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে আখাতার হোসেন, আবদুস ছাত্তার ভূইয়া, মো. আহসান উদ্দিন খান, রুমিন ফারহানা, শেখ মোহাম্মদ শামীম, আবু আসিফ আহমেদ, মো. মোবারক হোসেন, এস.এন তরুণ দে ও মো. আনোয়ার হোসেন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে মো. তৌফিকুল ইসলাম ও খালেদ হোসেন মাহবুব দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনে মুশফিকুর রহমান, মোহাম্মদ সেলিম, নাছির উদ্দিন হাজারী ও মুসলিম উদ্দিন দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে কাজী নাজমুল হোসেন, তকদীর হোসেন মো. জসিম ও মো. সালাহ্ উদ্দিন ভূইয়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে আবদুল খালেক, মো. মেহেদী হাছান, মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম হিকদার দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপ্রাপ্ত এসব নেতাদের মধ্যে অনেককেই চেনেন না দলীয় নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আসা-যাওয়া না থাকায় ভোটারদের কাছেও অপরিচিত তারা। অবশ্য দলীয় নেতাকর্মীরা এসব অপরিচিত প্রার্থীদের ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবেই আমলে নিচ্ছেন। আর ‘আসল প্রার্থী’ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে সৈয়দ এ.কে একরামুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আবদুস ছাত্তার ভূইয়া ও শেখ মোহাম্মদ শামীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে খালেদ হোসেন মাহবুব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মুশফিকুর রহমান ও নাছির উদ্দিন হাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে কাজী নাজমুল হোসেন ও তকদীর হোসেন মো. জসিম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে আবদুল খালেক ও রফিকুল ইসলাম হিকদারকে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে থাকা এসব হেভিওয়েট প্রার্থীরা দল এবং ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছেন বলেও দাবি করেন নেতাকর্মীরা। এসব ‘আসল প্রার্থীদের’ মধ্যে আবদুস ছাত্তার ভূইয়া ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন মুশফিকুর রহমান আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবদুল খালেক নির্বাচিত হন।
‘ডামি আর আসল প্রার্থীর’ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ.বি.এম মোমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, কৌশলগত কারণেই প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সবাই তো আর রাজনৈতিক সচেতন না। একাধিক প্রার্থীর বিষয়ে নিউজ দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছিল। পরে বিষয়টি আমরা তাদেরকে পরিষ্কার করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) ভুল-ত্রুটি থাকলেও সেগুলো ধরা হবে না কিন্তু আমাদের ভুল-ত্রুটি মাইক্রোস্কুপ দিয়ে খুঁজে বাদ দেয়ার চেষ্টা করবে। সেজন্য উপরের নির্দেশনাতেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর মূল ও হেভিওয়েট প্রার্থীরাই থাকবেন।
আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস