বগুড়ার এক ছাত্রীকেও বিরক্ত করতেন নাটোরের ডিসি
অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলো নাটোরের জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানকে। রোববার দুপুরে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে গোলামুর রহমানের পরিবর্তে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. শাহরিয়াজ। বদলির নির্দেশে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে জনস্বার্থে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব আনিসুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে এই বদলি ও নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়।
নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছেছে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে। নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দেয়ায়, ভুক্তভোগী ওই ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোলামুর রহমান।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন গোলামুর রহমান। বিসিএসএসের ২০তম ব্যাচের এই ক্যাডার অফিসার সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন শিপিং কর্পোরেশনের ম্যানেজার হিসেবে।
সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে ২০তম জেলা প্রশাসক হিসেবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে যোগদানের পর থেকেই সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা এবং নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে তার প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিল নাগরিক সমাজ।
এদিকে জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান যোগদান করার পর তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠে নারী ম্যাজিস্ট্রটকে যৌন হয়রানির বিষয়টি।
সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে এক নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার এবং মোবাইল ফোনে কু-প্রস্তাব দেন তিনি। জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের এই অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্নভাবে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে হয়রানি করেন তিনি। পরে ভুক্তভোগী ওই নারী ম্যাজিস্ট্রেট লিখিতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে ওই নারী ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। শুধু নারী ম্যাজিষ্ট্রেট নয়, জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের বিরুদ্ধে বগুড়া আর্ট কলেজের এক ছাত্রীকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গত ৭ নভেম্বর নাটোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে পুরাতন ডিসি বাংলো পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান। এসময় ডিসি বাংলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডিসি অফিসের মাস্টার রোলের কর্মচারী মোতালেব হোসেন গেটের চাবি আনতে দেরি করায় শারীরিকভাবে তাকে মারপিট করেন ডিসি।
নাটোর সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ শহিদল্লাহ বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসকের কোনো সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না। সালফার আনার অনুমতির জন্য ১৫ দিন ধরে তার কার্যালয়ে ঘুরেও তিনি অনুমতি দেননি। ফলে সালফারের অভাবে মিলটি যেকোনো দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া মিল জোন এলাকায় পাওয়ার ক্রাসার দিয়ে অবৈধভাবে আখ মাড়াই চললেও জেলা প্রশাসকের কোনো সহযোগিতা পাইনি আমরা। যার কারণে এবারও লোকসান গুনতে হতে পারে।
এছাড়া গত ৭ নভেম্বর কান্দিভিটা এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুরাতন পার্ক ভেঙে লেডিস ক্লাব করেন বর্তমান জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে নাটোরের লেখক সাহিত্যিক, আইনজীবী ও সাংবাদিকগণ শিশু পার্কটি চালু কারার দাবিতে স্বারকলিপি দিলেও আজ পর্যন্ত তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান বলেন, কখনও কখনও তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়। কেউ হ্যাক করে এই কাজগুলো করে থাকতে পারে।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হলেও আপনি আইনগত ব্যবস্থা নেননি কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলে। তবে আমি ফেসবুকের বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাই না। তবে কোনো কর্মচারীকে মারপিটের ঘটনা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতাসহ ৬ দফার একটি গোপন প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোপন ওই প্রতিবেদনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিরোধ উল্লেখ করে আসন্ন নির্বাচনে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রেজাউল করিম রেজা/এমএএস/আরআইপি