আবুর মতো নেতা আর হবে না
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়ন চাইতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবু বকর আবু (৭০)। শুক্রবার দুপুরে তার মরদেহ যশোরের কেশবপুরে এসে পৌঁছায়। পরে দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
গত ১৮ নভেম্বর রোববার রাত ৮টার পর রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। এর দুই দিন পর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ছবি দেখে মরদেহ শনাক্ত করে আবুর পরিবারের সদস্যরা।
আবু বকর আবু কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, অপহরণের পর কেশবপুর ও ঢাকার সংশ্লিষ্ট থানায় বারবার ধরনা দিলেও পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ ও ঘটনার তদন্ত করতে গড়িমসি করেছে।
আবু বকর আবুর ছোট বোন আঞ্জুমানারা বলেন, দুই থানায় বারবার গেলেও কোনো থানাই অভিযোগ নেয়নি। নানা অযুহাতে ঘুরিয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার আমরা জানতে পারি তার মরদেহ পাওয়া গেছে।
এদিকে আবু বকর আবুর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কেশবপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তার মরদেহ ঢাকা থেকে কেশবপুরে এসে পৌঁছায়। বাদ জুম্মা কেশবপুর পাবলিক মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু। এছাড়াও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয়রা বলেন, রাজনীতি ও সামাজিক কাজের কারণে জীবনে বিয়েও করেননি আবু। এমন নেতা আর এই এলাকায় হবে না।
আবু বকর আবুকে শেষ বারের মত দেখার জন্য ৪ কিলোমিটিার দূর শিকারপুর থেকে আসেন জামেলা বেগম। তিনি বলেন, আবু চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে আমি আমার সন্তান হারানোর শোক পেয়েছি। এ সময় তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল।
মজিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মনোজ তরফদার বলেন, আবু বকর আবু চেয়ারম্যান হিসেবে দলমতের ঊর্ধ্ব অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন মানুষ ছিলেন।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আবুর মৃত্যুতে বিএনপি একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। আমরা আবু হত্যার বিচার চাই। এখন পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তার সূত্র ধরে প্রশাসন যথাযথ তদন্ত করলে এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য আবু বকর আবু গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় যান। পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের চতুর্থ তলায় ৪১৩নং রুমে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেন ও জমা দেন। সাক্ষাৎকার বোর্ডে অংশ নেয়ার জন্য ওই হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। ১৮ নভেম্বর রোববার রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গী মজিদপুর ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম ওষুধ কিনে ফিরে এসে তাকে আর রুমে পাননি। এদিন সন্ধ্যারাতে হোটেলের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
মিলন রহমান/আরএআর/পিআর