আ.লীগের তৃণমূলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ৪
>> আর কত বাবার বুক খালি হলে বাঁশগাড়ির রক্তক্ষয়ী বিবাদ থামবে?
>> ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল
>> স্থানীয়রা বলছেন চারজন, পুলিশ বলছে তিনজন নিহত
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ও নীলক্ষায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে ও দুপুরে পৃথক এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ি গ্রামের আবদুল্লাহ ফকিরের ছেলে ও স্থানীয় বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা (১৬), নীলক্ষা ইউনিয়নের বাড়ীগাঁও গ্রামের সোহরাব (৩০) ও একই ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের সোবান মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭) ও অজ্ঞাত পরিচয় একজন।
পৃথক সংঘর্ষে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য, সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
শুক্রবার সকালে পূর্বশত্রুতার জেরে প্রয়াত সিরাজুল হক চেয়ারম্যানের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের নেতৃত্বে তাদের লোকজন বালুমাঠ এলাকায় প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হন আরও ছয়জন। তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে আসি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজ-খবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হলো। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ থামবে তা আমাদের জানা নেই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
অপরদিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষার গোপীনাথপুর বীরগাও কান্দাপাড়া গ্রামে শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম সরকারের সমর্থকরা।
আবদুল হক সরকার ও তাজুল ইসলাম সরকার দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। হামলার একপর্যায়ে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর গোপিনাথপুর গ্রামের সোবান মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭) মারা যান। এছাড়া সংঘর্ষে অজ্ঞাত পরিচয় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
এ ব্যাপারে নীলক্ষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে হত্যার পর তার হত্যাকারীরা গা ঢাকা দেয় এবং তারা নিজ এলাকা ছেড়ে সফি মেম্বারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মূলত সিরাজুল ইসলাম ও সাহেদ সরকারের সমর্থকদের ঝগড়া নীলক্ষা ইউনিয়নেও ছড়িয়ে পড়েছে।
রায়পুরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন উল কাদির বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পৃথক দুটি ঘটনাই আধিপত্য বিস্তারের জেরে। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এই আধিপত্য দীর্ঘদিনের। দুই দলের দুই নেতা সাহেদ সরকার ও সিরাজুল চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর বেশ কিছু দিন এই সংঘর্ষ ছিল। আজ (শুক্রবার) ভোরে হঠাৎ সাহেদ সরকারের সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। ওই সময় প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুলের সমর্থকরা বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষ রাশগাড়ী ছাড়িয়ে নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, হামলা পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কতজন আহত হয়েছে, সেটা এখনও নিশ্চিত নই। কারণ, চরাঞ্চলে যাতায়াতের কোনো ব্যাবস্থা নেই। এক কথায় রিমোট এরিয়া। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করছে। এরই মধ্যে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলিসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সঞ্জিত সাহা/আরএআর/পিআর