মনোনয়ন না পেলেই দল বদল করেন শাহীন
২০০১ সালে বিএনপির বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন এম এম শাহীন। এরপর ফিরে আসেন বিএনপিতে। কিন্তু ১/১১ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় যোগ দেন কিংস পার্টিতে। পরে আবারও দলে ফিরে গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন তিনি।
কিন্তু রাতারাতি দল বদল করে ফের বিএনপি ছাড়লেন এম এম শাহীন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারায় যোগদান করেছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফন্ট থেকে মনোনয়নের অনিশ্চতার কারণেই শাহীন দল বদল করেছেন বলে জানা গেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মনসুর মনোনয়ন পাবেন, যা অনেকটাই নিশ্চিত। তাই দল বদল করলেন এম এম শাহীন। বছর বছর দল বদল করায় ইতিমধ্যে তিনি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
তার এলাকার মানুষ বলছেন- মনোনয়ন না পেলেই তিনি দল বদল করেন। ধারণা করা হচ্ছে বিকল্প ধারা থেকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে তিনি মৌলভীবাজার-২ আসনে নির্বাচন করবেন।
এদিকে তার এই দল বদল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নোতারা। তারা বলছেন- ভোটের মাঠে সারাদেশের নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন এক জোট হয়েছে। অনেকে নিজের জানমাল বিনষ্ট করে দলের এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কাজ করছে। এই মুহূর্তে এম এম শাহীন নিজের স্বার্থে দল বদল করে দলের সঙ্গে আবারও বেইমানি করেছেন।
কয়েকজন বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি যদি ঐক্যফ্রন্টের নমিনেশন না পেয়ে আগের মত স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেন, আমরা তার পক্ষে কাজ করতাম। কিন্তু এখন তিনি যাদের সঙ্গে গেছেন তাদের নির্যাতনে আমরা ১০ বছর রাজনীতির মাঠে নামতে পারেনি।
কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান খান বলেন, আমরা তাকে দলীয় মনোনয়ন কেনার জন্য বলেছি কিন্তু তিনি দল বদল করেছেন। এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমরা ঐক্যফ্রন্ট থেকে যে ধানের শীষ নিয়ে আসবেন তার পক্ষে কাজ করবো।
এর আগে গতকাল বুধবার কুলাউড়াস্থ নিজ বাসভবনে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এম এম শাহীন। ওই সময় তিনি বলেন, বিএনপি আমার সঙ্গে আলাপ না করে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের মে মাসে দলীয় হাইকমান্ড থেকে আমাকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ আমার সঙ্গে কোনো কথা না বলেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ওই নেতাকে (সুলতান মনসুর) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা কো হচ্ছে। বিষয়টি আমি জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব কোনো সদুত্তোর দেননি। উনি (সুলতান মনসুর) জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লো গান দিয়ে মুজিব কোট পরে শহীদ জিয়ার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন সেটা মেনে নেয়া যায় না।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দলের বিরুদ্ধে যাওয়ার ইতিহাস উনার অনেক পুরাতন। তবে দলের এই কঠিন সময়ে নিজের স্বার্থের কথা ভেবে দল বদল করায় উনার আদর্শ এবং দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন তিনি আমাদের নন তাই আমরা ঐক্যফ্রন্টের যে মনোনয়ন পাবে তার পক্ষে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবো।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তার অতীতের কার্যক্রমের কারণে দলের হাইকমান্ড বারবার বিরক্ত হয়েছে। এখন তিনি চলে গেছেন। আমরা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নিয়ে কাজ করবো।
রিপন দে/আরএআর/পিআর