ছয়বারের এমপি দবিরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী এবার ছেলে
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও-২ আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বাবা-ছেলেসহ আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতাকর্মী।
এরা হলেন- বর্তমান এমপি ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব দবিরুল ইসলাম ও এমপির বড় ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-১ অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার, প্রয়াত ভাষাসৈনিক, এমএলএ ও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দবিরুল ইসলামের সেজো ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপ এবং জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিনা ইয়াসমিন রিপা।
এদিকে একই আসনে বাবা-ছেলের মনোনয়ন ফরম কেনার খবরে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন পদধারী নেতা জানান, বাবার পক্ষে কাজ করতেই ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে বিষয়টিকে তারা নেতিবাচক বিবেচনা করছেন। এখানে জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
আরেকটি সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম ৬ বারের নির্বাচিত এমপি। আর ৬ষ্ঠ বার বিনাভোটে এমপি হয়েছেন তিনি। এর আগে মনোনয়ন লাভের জন্য এভাবে কাউকে তার বিরুদ্ধে যেতে দেখা যায়নি। এবার তার পরিবারের সদস্যদের বিতর্কিত কিছু কার্যক্রম, রাজনীতিকে পরিবারতন্ত্র করা আর নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার কারণেই মনোনয়ন পেতে বেগ পেতে হবে। এজন্য ইতোমধ্যেই নিজের স্থানীয় জনপ্রিয়তা ও সমর্থন রয়েছে বলে উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা এবং ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছ থেকে রেজুলেশন করে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন দবিরুল। তারপরও আসন্ন নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি নৌকা মার্কাকে উপহার দিতে দলের অনেক নেতারা এবার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
এ বিষয়ে এমপি দবিরুল ইসলামের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি এবং আমার পরিবার আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। আমি পদে আছি। মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা আমার আছে। আর এই আসনে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই আমি মনোনয়ন ফরম কিনেছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার পক্ষে তখন কাজ করব।
তবে এমপি দবিরুল ইসলাম বলেন, বিরোধী কিছু কুচক্রি আমার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় অপকর্ম করছে আমার দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করার জন্য। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আমি প্রার্থী হলে নৌকা প্রতীক আবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
মনোনয়নে পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের মধ্যে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে।
রাজনৈতিক পটভূমি
হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও রাণীশংকৈল (আংশিক) উপজেলা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের নির্বাচনী এলাকা গঠিত। আসনটিতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৪ জন ভোটার রয়েছে। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত এ আসনটিতে আধিপত্য ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের এমপি আলহাজ্ব মো. দবিরুল ইসলাম।
কারণ তিনিই একমাত্র প্রার্থী, যিনি কখনো জামায়াত, কখনো জাতীয় পার্টি আবার কখনও বিএনপির সঙ্গে লড়াই করে পর পর ৬ বার ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত এ কারণেই এমপি দবিরুল ইসলামকে এলাকার লোকজন ভোটের জাদুকর হিসেবে চেনে।
দীর্ঘদিন এমপি থাকার কারণে এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সব অঙ্গ সংগঠনকে সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হিসেবে এলাকায় গড়ে তুলেছেন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা চালালেও এ আসনে তেমন কিছুই করতে পারেনি। অনেকেই এর একমাত্র কারণ হিসেবে এমপি দবিরুল ইসলামের শক্ত অবস্থানকে মনে করেন।
ভোটের পরিসংখ্যান
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের আওতায় রয়েছে বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলা এবং রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড়, কাশিপুরসহ ১৬টি ইউনিয়ন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে বাদ দিলে ১৯৮৬ সাল থেকে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন মো. দবিরুল ইসলাম। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
কখনও জাতীয় পার্টির সঙ্গে, কখনও বা বিএনপি অথবা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী যুদ্ধে বরাবরই জয়ী এই নেতা সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নানামুখী কর্মকাণ্ড চলছে। দলগুলো থেকে কে পাবেন মনোনয়ন তার জন্য এখন অপেক্ষার পালা। এ আসনে পুরাতন ইতিহাস মুছে ফেলে ৩০ বছর ধরে দখলে থাকা প্রার্থীকে টপকিয়ে অন্য কেউ মনোনয়ন পাবেন কিনা, সেই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কোণঠাসা হওয়ায় আব্দুল হাকিম প্রার্থী হবেন কিনা এবং বিএনপির ২ প্রার্থীর সঙ্গে মিলে জোট থেকে তাকে একক প্রার্থী দেয়া হবে কিনা এ সব কিছুই এখন দেখার অপেক্ষা।
রবিউল এহসান রিপন/এফএ/আরআইপি