ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ছায়েদুল হকের আসনে নৌকার বিরোধীরাও হতে চান মাঝি

আজিজুল সঞ্চয় | ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশিত: ০৯:১৪ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক। আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান এই নেতা ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। জীবদ্দশায় নাসিরনগর উপজেলায় একক আধিপত্য ছিল তার। গত ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ছায়েদুল হক।

ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হয়ে যাওয়া এ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় ছিলেন ১২ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে ছায়েদুল হকের সহধর্মীণি দিলশাদ আরা মিনু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকার ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা এম.এ করিম ছিলেন অন্যতম। তবে শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফরহাদ হোসেন সংগ্রামকে।

মনোনয়ন না পাওয়ার দুঃখ ভুলে মন্ত্রী-পত্নী মিনু তখন সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবে মনিরজ্জামানসহ বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছিলেন সংগ্রামের বিরোধী। একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করা মনিরুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় উপ-নির্বাচনে মনিরুজ্জামান ও এম.এ করিমের বিরুদ্ধে নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী রেজওয়ানুর রহমানের সঙ্গে লড়াই করেন সংগ্রাম। মনিরুজ্জামান সরকার তখন নৌকার বদলে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান বলে অভিযোগ ওঠে। এজন্য স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি সভায় তোপের মুখে পড়েন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তখন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ফলশ্রুতিতে মনিরুজ্জামানের নিজ এলাকা বুড়িশ্বরে লাঙ্গল প্রতীকের কাছে নৌকা প্রতীক পরাজিত হয়।

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী এম.এ করিম তার এক ঘনিষ্ঠজনকে মোবাইল ফোনে নৌকা প্রতীক যেন ভোট না পায় সেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যদি নৌকা ভোট পায় তাহলে তার ক্ষতি হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেই ফোনালাপের একটি অডিও ফাঁস হয়েছিল। তবে দলীয় নেতাদের এমন বিরোধীতার পরও শেষ পর্যন্ত ভোটের সেই লড়াইয়ে সংগ্রামই বিজয়ী হন।

দলীয় নেতাদের এমন বিরোধীতায় প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে ভোটারদের কাছে নিজের অবস্থান পাকাপুক্ত করার মিশনে নামেন সংগ্রাম। পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন তিনি। ইতোমধ্যে ভোটারদের মন জয় করে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন বলেও দাবি সাংসদ সংগ্রামের।

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দিলশাদ আরা মিনু, মনিরুজ্জামান সরকার ও এম.এ করিম মিলে ১১ জনের একটি জোট গঠন করেছেন। সেই জোটের নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে দলীয় সাংসদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। সংগ্রামকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দিয়ে তাদের ১১ জনের মধ্যে থেকে কাউকে দেয়ার জোর দাবি তুলেছেন।

১১ জনের জোটের বাকি নেতারা হলেন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের অর্থ সম্পাদক নাজির মিয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী প্রজন্ম লীগের সহ-সভাপতি ইখ্তেশামুল কামাল, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী এম.বি কানিজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হিন্দু মহাজোটের সভাপতি রাখেশ সরকার, নাসিরনগর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আদেশ চন্দ্র দেব, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলমগীর, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হক ও জেলা কৃষক লীগের সদস্য মো. আলী আশ্রাফ।

এদের মধ্যে নাজির মিয়ার বাড়ি নাসিরনগরের পার্শ্ববর্তী বিজয়নগর উপজেলায়। তার শ্বশুর ক্যাপ্টেন (অব.) গোলাম নূর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। নাজির এবার নাসিরনগর থেকে নির্বাচন করার জন্য সেখানে বাড়ি কিনে স্থায়ী আবাস গড়েছেন। পাশাপাশি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ভোট নাসিরনগরে স্থানান্তর করেছেন।

অন্যদিকে, উপ-নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করে এবার নিজেরাই নৌকার মাঝি হতে চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিব্রত দলীয় নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি ছায়েদুল হকের জীবদ্দশায় তার সঙ্গে যাদের বিরোধ ছিল তাদের জোটে নাম লেখানোয় দিলশাদ আরা মিনুর প্রতিও ছায়েদুল হকের অনুসারীদের কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নিজেকে জোট থেকে সরিয়ে নিলেও সম্প্রতি আবারও জোটে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।

নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করে নৌকার প্রার্থী হতে চাওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, আমি বিগত ২০০৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। আমি সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগকে পাশ করানোর জন্য অনেক করেছি। এজন্য এই এলাকায় বারবার নৌকা জিতেছে। বিগত উপ-নির্বাচনে জাপার পক্ষে ভোট চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। এটা বর্তমান এমপির লোকজনের ষড়যন্ত্র। নিজ এলাকা বুড়িশ্বরে লাঙ্গল প্রতীকের কাছে নৌকা প্রতীক পরাজিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সভাপতি ইকবাল চৌধুরীর বাড়িও একই এলাকায়।

নৌকার বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা এম.এ করিম বলেন, এটা (ফোনালাপ) আমার না। অন্যরা ষড়যন্ত্র করে পাঠিয়েছে। আমি নৌকার পক্ষে যে কাজ করেছি এলাকাবাসী জানেন। এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। আমি দলের মনোনয়ন চাইবো। তবে দল যাকে মনোয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. রাফিউদ্দিন বলেন, উপ-নির্বাচনে আমি তাদের (মনিরুজ্জামান ও করিম) ইউনিয়নে গিয়ে বলেছি আপনারা নৌকায় বসে নৌকা টানেন, এগুলো খুব খারাপ। যারা আওয়ামী লীগে থেকে নৌকার বিরোধীতা করে আমি তাদের ঘৃণা জানাই। নৌকার বিরোধীতা করে নৌকার প্রার্থী হওয়াটা নিন্দনীয়। দল থেকে যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হবে আমরা তার জন্যই কাজ করব।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমাদের দলে নেতাকর্মীর সংখ্যাও বেশি। তাই যে কেউই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন। নাসিরনগরে ১১ জনের জোট নিয়ে তিনি বিব্রত নন বলেও দাবি করেন।

এমএএস/এমএস

আরও পড়ুন