এসএসসির ফরম পূরণে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে সিলেটে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের এক নির্দেশনায় অতিরিক্ত ফি আদায় না করার জন্য বলা হলেও সে নির্দেশনা মানছে না বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সিলেট নগরের দি এইডেড হাই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, ৩ নভেম্বরের দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন স্কুল থেকে ৫ নভেম্বর ফরম পূরণের শেষ দিন বলে জানানো হয়। এ সময় সবাইকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলেন প্রধান শিক্ষক শমসের আলী। এতে বিপাকে পড়েন অনেক অভিভাবক। হুট করে এভাবে টাকার জোগাড় করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিভাবকদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ বিজ্ঞান বিভাগের জন্য মোট ৩ হাজার ৭০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আর মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের জন্য ৩ হাজার ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছে না।
এইডেড স্কুলের প্রধান শিক্ষক শমসের আলী বলেন, ফরম পূরণ বাবদ ১৮০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কোনো অতিরিক্ত ফি নেয়া হচ্ছে না।
অভিভাবকদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, অভিভাবকরা ঠিক কথা বলেননি। হয়তো কারও আগের বকেয়া ফি রয়েছে তা মিলিয়ে নেয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত টাকা নিয়ে রশিদ না দেয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করে তিনি বলেন, স্কুল রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। তাই কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছে না।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন ভিন্ন কথা। বাণিজ্য বিভাগের এক ছাত্রের বাবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা রাখা হয়েছে। কোনো রশিদ দেয়া হয়নি। আমরা রশিদ চাইলে দেয়া যাবে না বলে জানান শিক্ষিকা ফাহমিদা। স্কুল রেকর্ডে আমার ছেলের আগের কোনো টাকা বকেয়া নেই।
একই চিত্র দেখা যায় নগরের ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ব্লু-বার্ড হাই স্কুল, অগ্রগামী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে।
তবে বাড়তি ফি নেয়ার ক্ষেত্রে আরও অগ্রগামী সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হাজী ইসরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়। কোনো কিছু আড়াল না করেই সরাসরি নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দিয়েছেন ফি’র তালিকা।
বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের জন্য ৩ হাজার ৪০৫ টাকা আর ছাত্রীদের জন্য ৩ হাজার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবিক ও বাণিজ্যিক শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ৩১৫ ও ৩ হাজার ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হাজী ইসরাব আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত টাকার বাইরে বাড়তি যে টাকা নেয়া হচ্ছে সেটা ৩ মাসের কোচিংয়ের জন্য।
কোচিংয়ের টাকা আলাদাভাবে না নিয়ে একসঙ্গে নিচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নোটিশ বোর্ডে কোচিংয়ের টাকা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি সেটা ঠিক, তবে যারা কোচিং করবে তাদের রশিদে আলাদা করে টাকার হিসাব উল্লেখ করা থাকবে। আর যারা কোচিং করবে না তাদের কাছ থেকে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি গ্রহণ করা হবে।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসার গোলজার আহমদ জানান, ফি নির্ধারণ করে মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে কিনা তা আমরা মনিটর করব। এমন কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছামির মাহমুদ/এএম/জেআইএম