ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দশ পয়সায় শুরু, এখন পাঁচ টাকা

জেলা প্রতিনিধি | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৮

গভীর রাত। সবাই ঘুমিয়ে। কেবল ঘুম নেই ৬৫ বছর বয়সী সিরাজ উদ্দিন নক্তির চোখে। ওপারে কে যেন এসে ডাকছে, ও দাদা পার করে নিয়ে যাও। নদীর এপার আর ওপার করতে করতে তার কেটে গেছে দীর্ঘ ৪৫ বছর।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার রাজগঞ্জ কৃত্তিনাশা নদীর খেয়া ঘাটে মাঝি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের আড়িগাঁও গ্রামের মৃত লাল উদ্দিন নক্তি ও মৃত হাজু বিবির বড় ছেলে সিরাজ উদ্দিন নক্তি।

দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হয় সিরাজ উদ্দিন নক্তির সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, কৃত্তিনাশা নদীটি তিনি কাটতে দেখেছেন। নদীটি কাটার পর পরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে হামলা চালায়। শুরু হয় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে স্বাধীন দেশ পায় বাংলাদশ। বাংলাদশ স্বাধীন হওয়ার পরে রাজগঞ্জ কৃত্তিনাশা নদীর খেয়া ঘাটে মাঝি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন একজন মানুষ পার করলে ১০ পয়সা করে পেতেন। কয়েক বছর পর ২৫ পয়সা, পরে ৫০ পয়সা, এক টাকা, দুই টাকা এবং এখন ৫ টাকা করে নদী পারাপার করেন তিনি। আগে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ পার করতেন। এখন পাশেই একটি সেতু তৈরি হওয়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ পার হয় প্রতিদিন।

shiraj

তিনি জানান, এ কাজে সিরাজ উদ্দিনের কোনো ইচ্ছে ছিল না। ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করার। কিন্তু ছোট বেলায় তার বাবা মারা যান মা ও ছোট বোনকে রেখে। তাদের নিয়ে সংসার চালাতে পেশা হিসেবে বেছে নেন মাঝির কাজ।

নৌকায় মানুষকে পারাপার করে দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে তার সংসার। সিরাজ উদ্দিনের তিন ছেলে ছয় মেয়ে। ইতোমধ্যে সাত সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সিরাজ উদ্দিন জানান, দুই পাড়ের মানুষগুলো তার আপন হয়ে গেছে। তাই এই পেশা ও মানুষকে ভালোবেসে এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি।

Shariatpur-Mazi-Shiraj-Udden

সিরাজ উদ্দিন বলেন, নৌকা চালানো আমার পেশা। এত দিন অতি যত্নে ধরে রেখেছি। নৌকা চালাতে চালাতে কখন যে কেটে গেল জীবনের ৪৫টি বছর তা বুঝতেই পারিনি। সরকার রাজগঞ্জ কৃত্তিনাশা নদীর উপর (এই ঘাটে) সেতু তৈরি করলে আমার স্বপ্ন পূরণ হতো। সেতুটি হলে এ কাজ থেকে অবসর নিতাম আমি।

নৌকা পারাপার হওয়া আড়িগাঁও গ্রামের ইকবাল বেপারী ও মো. জাহাঙ্গীর আলম ঘরামি বলেন, সিরাজ ভাই সহজ-সরল মানুষ। ছোট থেকেই তিনি এই ঘাটে বিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ দুই পারের মানুষ পারাপার করেন। তাকে ছাড়া নদীর ওই ঘাট শূন্য লাগে। আমরা এলাকার মানুষ সিরাজ ভাইকে অনেক ভালোবাসি।

ছগির হোসেন/এমএএস/পিআর

আরও পড়ুন