নোয়াখালী-৫ আসনে লড়বেন তারা
বিগত নির্বাচনগুলোর ন্যায় এবারও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭২, নোয়াখালী-৫ আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় এ আসনকে ভিআইপি আসন বলা হয়ে থাকে। দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর নির্বাচনী লড়াইয়ের কারণে জাতীয়ভাবে সবার দৃষ্টি থাকে এ গুরুত্বপূর্ণ আসনের দিকে।
এ আসনটি দুটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভা (কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা আট ইউনিয়ন ও কবিরহাট উপজেলার এক পৌরসভা সাত ইউনিয়ন) ও সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৮ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩১ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৩টি এবং বুথের সংখ্যা ৬১৬টি।
এ আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু নাছের চৌধুরী নির্বাচিত হন। ওবায়দুল কাদের ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে এক হাজার ৩৭২ ভোটের পরাজিত করে দ্বিতীয়বার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ওবায়দুল কাদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটের হিসাবে ওবায়দুল কাদের খুবই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। দল ক্ষমতায় থাকার সুবাধে সারা দেশের মতো নিজ নির্বাচনী এলাকায় বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ বিশেষ করে নদী ভাঙনরোধ মুছাপুর ক্লোজার, সোনাপুর-জোরারগঞ্জ সড়ক, নোয়াখালীর দুঃখ নোয়াখালী খাল পুনঃসংস্কারসহ স্কুল, কলেজ, মসজিদ মাদরাসা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন।
পাশাপাশি এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করায় দলীয় নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিকভাবে অনেক সক্রিয়। তার অনুপস্থিতে দলীয় নেতারা উঠান বৈঠক ও ভোটারদের নিয়মিত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে মতবিনিয় সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায় এখন তিনি।
এ আসন থেকে পাঁচ বার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সংসদ সদস্য নিবাচিত হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালে ব্যারিস্টার মওদুদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালে এ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করার পর তিনি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
এক বছর পর তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং হোসাইন মো. এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আ.লীগ-বিএনপির আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নোয়াখালী-৫ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তখন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
পাঁচ বার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী-৫ আসনে নির্বাচিত হন। এখানে তার ব্যক্তি ইমেজ ও দলীয় শক্ত অবস্থান রয়েছে। এছাড়া তিনি গত ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া জিয়াউর রহমানের আসন বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ব্যরিস্টার মওদুদ আহম্মদ এ আসনে ব্যাপকভাবে পরিচিত রয়েছে। এছাড়া মওদুদ আহম্মদ কোম্পনীগঞ্জ সরকারি মজিব কলেজ সরকারিকরণ, কবিরহাটকে উপজেলা ও পৌরসভা উন্নতিকরণ করেন। কবিরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজসহ এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন।
অন্য দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর কোম্পানীগঞ্জ পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে সাতজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত উপজেলা নির্বাচনে মেট্রো হোম্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুল ইসলাম চার দলীয় জোট থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এ থেকে তিনি এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দান অনুদান দিয়ে আসছেন। এলাকায় মাঝে মাঝে জনসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে।
সাধারণ ভোটার বলছেন, তারা উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তিতে থাকতে চান। ক্ষমতায় আসার নামে তারা আর জ্বালাও পোড়াও চান না। পাশাপাশি এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণে শিল্পকলকারখানা স্থাপন ও নিজ এলাকা থেকে উত্তোলিত গ্যাস বাসা বাড়িতে দেয়ার দাবি করেন এবং দেখে শুনে প্রার্থীকে ভোট দিবেন। এছাড়া এ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আরেক নেতার অবস্থান রয়েছে।
মিজানুর রহমান/এমএএস/এমএস