শ্রমিকদের কত করে বলেছি আমার মেয়েটা অসুস্থ
‘শ্রমিকদের কত করে বলছি আমার মেয়েটা অসুস্থ, এখনই হাসপাতালে না নিয়ে গেলে তারে বাঁচানো যাবে না। কত মিনতি করলাম কিন্তু তারা আমার কথা শুনেনি। আমি বুঝতে পারছিলাম মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে চোখের সামনেই আমার মেয়েটা মারা গেলো।’
এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলা বলছিলেন পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে গতকাল রোববার অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যাওয়া সাত দিনের শিশুর মা সায়রা বেগম।
গতকাল পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় মারা যায় সাতদিনের ওই কন্যা শিশু। তার বাড়িতে বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই মৃত্যুকে সহজভাবে কেউ মেনে নিতে পারছেন না। শিশুটির পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসছেন অনেকেই। এ ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
শিশুটির বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামে। সে প্রবাসী কুটন মিয়ার মেয়ে।
শিশুটির চাচা আকবর আলী জানান, অসুস্থ অবস্থায় সিলেট নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবহন শ্রমিকরা দুইটি যায়গায় তাদের আটকায় এবং সর্বশেষ চান্দগ্রামে প্রায় দেড় ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। পথে মোট আড়াই ঘণ্টা তাদেকে আটকে রাখে। এতে চান্দগ্রামে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই শিশুটি মারা গেছে।
তিনি বলেন, খুব অনুরোধ করার পর তারা আমাদের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করে। তখন আমরা ৫০০ টাকা দিলে তারা বলে তোমরা দিলে হবে না- ড্রাইভারকে দিতে হবে।
ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক শিপন আহমদ বলেন, তারা আমাকে মারধর করেছে, আমি হাসপাতালের রেফার্ডের কাগজ দেখানোর পরেও তারা তা মানতে চায়নি। তারা তখন চাঁদাও দাবি করেছে। তাদের দেখলে চিনব। তাদের মাঝে কিছু সিএনজি ড্রাইভারও আছে।
বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দ্রুত এ ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বড়লেখা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিন আলী বলেন, শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রিপন দে/আরএআর/এমএস