মারতে মারতে মৃত ভেবে ফেলে গেল তারা
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের স্বল্পযশোদল কালিকাবাড়ি গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে সাফিক। রোববার ভোরে বাড়ির পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল সে।
এ সময় পূর্ববিরোধের জেরে তাকে রাস্তা থেকে টেনেহিঁচড়ে ধরে আনা হয় একই গ্রামের লতিফের বাড়িতে। বাড়ির আঙিনায় একটি বরই গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় কিশোর সাফিকের ওপর।
আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। এক সময় মৃত ভেবে একটি বাঁশঝাড়ের পাশে ফেলে রাখা হয় তাকে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ভোরে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে সাফিককে ধরে নিয়ে যান কালিকাবাড়ি গ্রামের মো. আবদুল লতিফ।
গুরুতর অবস্থায় সাফিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চারতলায় গিয়ে দেখা যায়, আহত সাফিককে জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন বৃদ্ধা মা ফাতেমা।
তিনি বলেন, আমার দুনিয়াতে কেউ নেই। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই। আত্মীয়-স্বজন বলতে কেউ নেই। ঘরবাড়ি নেই। ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করে দুই ছেলেকে নিয়ে কোনোভাবে জীবন-যাপন করছি। আমার ছেলেকে মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় তারা। তাকে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। খবর পেয়ে আমি ঢাকা থেকে বাড়ি আসি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদ বলেন, ছেলেটির হাতে, পায়ে, বুকে ও গলায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত হলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে। সুস্থ হতে সময় লাগবে বেশ কিছুদিন।
এলাকাবাসী জানান, পূর্ববিরোধের জের ধরে ছেলেটিকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। সবার সামনে ঘটনাটি ঘটেছে, কিন্তু ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় ছেলেটিকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
কালিকাবাড়ি গ্রামের বাদল মিয়া বলেন, ভোরে ছেলেটিকে ধরে নিয়ে গাছের সঙ্গে হাত পেছন দিক থেকে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। কিল-ঘুষি-লাথি মেরেও তারা থামেনি; ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে হাত-পায়ে জখম করা হয়। এক সময় শাফিক জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মৃত ভেবে বাঁশঝাড়ের পাশে ফেলে রাখা হয়।
একই এলাকার ফরিদ মিয়া বলেন, স্থানীয় মেম্বারকে খবর দিয়ে আমি নিজে ২০০ টাকা দিয়ে ছেলেটিকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। এমন নির্যাতন মানুষ মানুষকে করে না।
অভিযুক্ত লতিফ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার দুটি ঘরই তালাবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, সাংবাদিক আসার খবরে তারা ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছেন।
এ সময় কয়েকজন নারী জানান, তারা নিজের চোখে ঘটনার নির্মমতা দেখলেও কিছুই করার ছিল না। লতিফ মিয়া প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
এদিকে, সাংবাদিকের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে তড়িঘড়ি করে থানায় মামলা রুজু করেন পুলিশ। এর আগে বিষয়টি জানানো হলেও গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ওসি আবুশামা মো. ইকবাল হায়াত বলেন, আমরা বিলম্বে ঘটনাটি জানতে পারি। ঘটনা শোনার পরপরই থানায় মামলা রুজু করা হয়। এ ব্যাপারে লতিফসহ নয়জনকে আসামি করে রোববার সন্ধ্যায় মামলা করা হয়। আহত শাফিকের মা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
নূর মোহাম্মদ/এএম/জেআইএম