কবরের ওপর দিয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের
পাবনার চাটমোহর উপজেলার টেঙরজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে গোরস্থানের মধ্যে কবরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে সবাইকে। শুধু তাই নয় বর্ষা মৌসুমে ওই স্কুলে যাতায়াত করতে হয় নৌকায় চড়ে। মূলত রাস্তা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে বিলের মধ্যে ভবন নির্মাণের ফলে এমন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সবাই।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালে স্থাপিত হয় টেঙরজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালে সরকারিকরণ হওয়ার পর ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্প-৩ এর মাধ্যমে সেখানে দুই তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ হয়। কিন্তু স্কুলে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়নি রাস্তা। এক সময় প্রাচীন এই স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অনেক। কিন্তু দুর্ভোগের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ জনে।
ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়কের পাশে প্রাচীর ঘেরা টেঙরজানি গোরস্থান, মসজিদ ও বিশাল পুকুর। গোরস্থানের পেছনে বিলের মধ্যে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে স্কুল ভবন। তবে গোরস্থানের প্রাচীরের কিছু অংশ ফাঁকা রাখা হয়েছে। রাস্তা না থাকায় কবরের ওপর দিয়েই প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে স্কুলের চারিদিকে পানি জমে থাকায় নৌকায় পারাপার হতে হয় সবাইকে। কবরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে বিবেকে বাধা দিলেও বাধ্য হয়ে সবাইকে যাতায়াত করতে হয়। এতে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রায়শ বাকবিতণ্ডা হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানাল, কবরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকে দূরের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এমন দুর্ভোগের কারণে কমে গেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এলাকবাসী বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরেও এ ব্যাপারে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
আরিফুজ্জামান ও সোনিয়া খাতুন নামে দুই অভিভাবক জানান, বাড়ির পাশে এত সুন্দর বিল্ডিং (স্কুল) হলো কিন্তু রাস্তা হলো না। কবরের ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করতে খুব খারাপ লাগে, বিবেকে বাধা দেয়। কিন্তু কি করবো রাস্তা থাকলে তো এইভাবে আসতে হতো না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সহকারী শিক্ষক বলেন, দেড় বছর পার হতে চললো কিন্তু টিও (শিক্ষা অফিসার) স্যার এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও স্কুল পরিদর্শনে আসেননি। তিনি না এলে কীভাবে বুঝবেন আমাদের দুর্ভোগ।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই স্কুলে সদ্য যোগদান করেছি। এর আগে আমি অনেক স্কুলে শিক্ষকতা করেছি কিন্তু এমন পরিস্থিতির শিকার কখনও হইনি। মৃত মানুষের কবরের ওপর দিয়ে স্কুলে আসতে হবে এটা ভাবতেও খারাপ লাগে। তবে এর আগে যারা ছিলেন তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে শুনেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ কখনও জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সরকারি স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা অবশ্যই থাকতে হবে। এ ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একে জামান/এমএএস/জেআইএম