ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রতি ১০ হাজারে জন্ম নেয় একটি সাদা বাঘ

রিপন দে | মৌলভীবাজার | প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

সাদা বাঘের জন্ম খুবই বিরল। ১০ হাজার বাঘের বাচ্চা জন্ম নিলে সেখান থেকে একটি হতে পারে সাদা বাঘ। এতদিন সাদা বাঘের দেখা পেতে যেতে হত দেশের বাইরের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায়। কিন্তু স্বপ্নের সেই বাঘের দেখা মিলছে এখন বাংলাদেশে, তাও একটি নয় আছে ২টা। দেশের ইতিহাসে চলতি বছরই প্রথম সাদা বাঘের দেখা মিলেছে।

কিন্তু কিভাবে এলো এই সাদা বাঘ? সাদা বাঘ কি আসলেই কোনো বিশেষ প্রজাতি? এসব নিয়ে নানা কৌতূহল থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে সাদা বাঘ আসলে কোনো আলাদা প্রজাতি নয়, এরা অন্য ৮/১০টা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতোই। জিনগত ও শ্বেত রোগের কারণে এসব বাঘের রঙ সাদা হয়।

সাধারণ বাঘ থেকেই এদের জন্ম হয় তবে তা সচরাচর হয় না। প্রতি ১০ হাজার বাঘের বাচ্চা জন্ম নিলে সেখান থেকে একটি সাদা বাঘ পাওয়া যেতে পারে।

চট্টগ্রাম চিরিয়াখানায় এবছরের ১৯ জুলাই ‘রাজ’ ও ‘পরী’ দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় একটি সাদা বাঘ। রাজ ও পরীকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। এই সাদা বাঘটিই দেশের ইতিহাসে প্রথম সাদা বাঘ। এর কিছুদিন পর চলতি বছরের ৮ আগস্ট গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জন্ম নেয় আরও একটি সাদা বাঘ।

কোনো প্রাণী ভিন্ন রঙের হলে সেটি প্রাণীবিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত হয় ‘এলবিনো’ হিসেবে। সাদা বাঘও এলবিনো হিসেবেই হতে পারে আবার জিনগত কারণে হতে পারে।

White-Tiger-(2)

বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে যে ২টি সাদা বাঘ জন্ম নিয়েছে তা জিনগত কারণেই সাদা হয়েছে। যদিও অনেকের ধারণা মেলানিনের অভাবে মানুষের শরীরে যেমন শ্বেতী রোগ হয়ে সারা শরীর সাদা হয়ে যায় বাংলাদেশের সাদা বাঘের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ শ্বেত রোগ হলে বাংলাদেশের সাদা বাঘের গায়ে যে ডোরাকাটা কালো দাগ আছে তা থাকার কথা নয় এবং চোখের মণি নীল না হয়ে ফ্যাকাশে থাকার কথা।

সাদা বাঘের জন্ম খুবই বিরল ঘটনা। সর্বশেষ অন্তত ৫০ বছর আগে মধ্যভারতে একটি সাদা বাঘ বুনো পরিবেশে জন্ম নেয়। তবে খাঁচাবন্দি অবস্থায় সাদা বাঘ বেশি হয় এর কারণ খাঁচায় জিনগত ত্রুটি সম্পন্ন নিকট আত্মীয়দের মধ্যে ক্রসিং ঘটে। যেমন বাপ-মেয়ে, ভাই-বোন।

তবে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে বরফ যুগের সময় বাঘের পূর্ব-পুরুষরা সাদা ছিল। যে কারণে তাদের জিনগত সে বৈশিষ্ট্য সুপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে যা মাঝে মাঝে প্রকাশ পাচ্ছে।

অন্যান্য বাঘ থেকে সাদা বাঘের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন তুলনামূলক ভাবে সাদা বাঘ জন্মের সময় সাইজে বড় থাকে, জন্মের পর দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ওজনও হয় বেশি। ২-৩ বছর বয়সে সাদা বাঘ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। সাদা পুরুষ বাঘ সাধারণত ওজনে ২০০ থেকে ২৬০ কেজি এবং দৈর্ঘ্যে ৩ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সু-জিন লুয়ো ও তার সতীর্থরা ‘কারেন্ট বায়োলজি’ নামক একটি জার্নালে সাদা বাঘ নিয়ে তাদের একটা গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। সেটা থেকে জানা যায়, জিনের একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থের পরিবর্তনই এই সাদা রঙের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীদের মতে কোনো প্রাণীর কোষের স্বাভাবিক রঞ্জক পদার্থই দেহবর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।

বিজ্ঞানীরা সাদা বাঘের দেহকোষের জিন পরীক্ষা করে দেখেছেন কোষের মধ্যে বিশেষ রঞ্জক জিন ‘এসএলসি ৪৫এ২’ আছে। বিশেষত মানুষসহ ঘোড়া, মুরগি ও মাছের দেহের হাল্কা রঙের জন্যও এই রঞ্জক পদার্থটি দায়ী। এই বিশেষ রঞ্জকটি কালো-হলুদ রং তৈরিতে বাধা দেয়। কিন্তু সাদা বাঘের গায়ে হাল্কা কালো ডোরার কারণ ‘এসএলসি৪৫এ’ জিনের মধ্যে ‘এ৪৭৭ভি’ নামক অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিবর্তন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান জাগো নিউজকে জানান, দুটি কারণে যেকোনো প্রাণী সাদা রঙের হতে পারে। একটি হচ্ছে শ্বেতী রোগ, অন্যটি জিনগত কারণ। বাংলাদেশের সাদা বাঘগুলোর জন্ম জিনগত কারণেই হয়েছে।

ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ও গবেষক আদনান আজাদ জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিড়িয়াখানায় সাদা বাঘ থাকলেও বাংলাদেশে ছিল না। কিন্তু এখন আর এই বাঘ দেখতে বিদেশ যেতে হবে না।

এফএ/পিআর

আরও পড়ুন