ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বিএনপির কোন্দল মিটলেই বিপদে পড়বে আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক | বরিশাল | প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নিয়ে বরিশাল-১ আসন। আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৫ জন। গত বারের চেয়ে এ আসনে ভোটার বেড়েছে ৩২ হাজার ৯৭৫ জন। ভোটকেন্দ্র বেড়েছে ৩৪টি।

সড়কপথে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভুরঘাটা দিয়ে এই আসনের নির্বাচনী এলাকার শুরু। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বরিশালের-১ আসন নিয়ে স্থানীয়ভাবে চলছে নানা আলোচনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে।

বসে নেই জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বরিশাল-১ আসনে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাপা।

তবে বিএনপির ক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ জেলায় অনেকটা কোণঠাসা দলটি। হামলা-মামলা আর কারাবাসে দলীয় নেতারা পর্যুদস্ত। কারাগার আর আদালতে ঘোরাঘুরি করেই বেশির ভাগ সময় পার করেছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া দলীয় কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি।

এ সবের মধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে জামায়াত। জোটগতভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে বরিশাল-১ আসনটি বিএনপির কাছে চাইবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিবন্ধন হারানো দলটি। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি।

সেদিক দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই নির্বাচনী এলাকায় এককাট্টা আছেন। এ আসনে এবারও আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের একক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই মন্ত্রী পদমর্যাদার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

এক সময় বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কর্ণধার পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে হাসানাত। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জয়ের পর তিনি চিফ হুইপ হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপনের কাছে পরাজিত হন। পরাজয়ের পর ওই রাতেই বরিশাল ছাড়েন হাসানাত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। এর দুটিতে ৩৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। এ কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। নবম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।

পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলাগুলো প্রত্যাহার হলে হাসানাত বরিশালে ফেরেন ২০০৯ সালে। পরে ২০১৪ সালের বিএনপি বিহীন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

এরপর যতই সময় পার হয়েছে দিন দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর অবস্থান আরো শক্ত হয়েছে। শুধু বরিশাল জেলা বা মহানগর নয়, বিভাগের ৬ জেলায় থাকা ২১টি নির্বাচনী এলাকা আর প্রায় সব উপজেলা-পৌরসভাতেই রয়েছে তার আধিপত্য।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেনের (হিরণ) মৃত্যুর পর বরিশাল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। অনুসারীদের মতে তিনিই এখন আওয়ামী লীগের বরিশাল অঞ্চলের অভিভাবক।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে হাসানাত আবদুল্লাহর বিপক্ষে দলে বা মহাজোটে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেই বলে তার অনুসারীরা দাবি করছেন।

তবে অপর একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে তীব্র আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে তা প্রকাশ করতে পারছেন না আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দলের অনেকেই।

এদিকে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দলে জর্জরিত। কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা কোন্দল ও বিভক্তির সমাধান হয়নি এখনও। দলীয় কোন্দলের কারণে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যান তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহাবুব।

১৯৯৩ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন জহির উদ্দিন স্বপন। ১৯৯৬ সালে এ আসনে ফের মনোনয়ন পান কাজী গোলাম মাহবুব। তবে জহির উদ্দিন স্বপন মনোনয়ন না পেয়ে তার সমর্থকদের নিয়ে নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধিতা শুরু করেন। বিরোধিতার কারণে কাজী গোলাম মাহবুব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর কাছে ফের পরাজিত হন।

২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির মনোয়ন পান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলানোর কারণে জহির উদ্দিন স্বপনকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। মনোনয়ন না পেয়ে এই নির্বাচনেও প্রকাশ্যে সোবাহানের বিরোধিতা করেন জহির উদ্দিন স্বপন। দলীয় কোন্দলের কারণে সেবারও আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে বিএনপি প্রার্থী আব্দুস সোবাহান পরাজিত হন।

মামলা হামলায় কোণঠাসা দলটিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি অভ্যন্তরী কোন্দল আর বিভক্তি আরো প্রকট হয়েছে। তৃণমূলে কয়েক ভাগে বিভক্ত এ দলটির মনোনয়নের জন্য লড়ছেন অন্তত ৪ জন নেতা। তারা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও সংস্কারপন্থী হিসেবে দলের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।

অপরদিকে জোটগতভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া আসনে প্রার্থী দেবে জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে এরইমধ্যে নিবন্ধন হারানো দলটি তাদের প্রার্থীও চূড়াস্ত করেছে।

দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে জোটের সমর্থন নিয়ে তাদের দলীয় প্রার্থী পশ্চিম জেলা কমিটির মজলিসে শূরা ও কর্ম পরিষদের সদস্য হাফেজ কামরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই আসনে জোটগতভাবে বিএনপির কাছে ছাড় পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত।

এছাড়া নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বরিশাল-১ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) বরিশাল জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, এ আসনে সম্ভাব্য প্রর্থী তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি সোহেল পারভেজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সেকান্দার মিয়া, আগৈলঝাড়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হারুন আর রশিদ রানা এবং গৌরনদী উপজেলার সভাপতি ইউনুস বেপারী।

অন্যদিকে বরিশাল-১ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে চরমোনাইর পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

ইসলামী আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. সিরাজ জানান, বরিশাল-১ আসনে মেহেদি হাসান রাসেলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দলের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসমর্থন আদায়ে বরিশাল-১ আসনে দলের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এফএ/পিআর

আরও পড়ুন