ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জোটেও স্বস্তি নেই

সায়ীদ আলমগীর | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১১:৩০ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

বর্তমান সরকারের আমলে কক্সবাজার জেলায় চলছে ৬৯টি মেগাপ্রকল্প। এসব প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। এরমাঝে কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর, এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্টজোন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ চলমান বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্পে দেশের সিঙ্গাপুরে পরিণত হচ্ছে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। ফলে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হতে যাওয়া মহেশখালী-কুতুবদিয়া নিয়ে কক্সবাজার-২ আসনটি সব দল কিংবা জোটের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনের সংসদ সদস্যও কেন্দ্রে সেভাবেই গুরুত্ব পাবেন এমনটি বুঝতে পেরেই জোটের সবদলই নিজ প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন চাচ্ছে।

তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো বিকাশে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) হচ্ছে নাকি গণতান্ত্রিক পন্থায় ভোটে হবে এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিকাশে হলে কে আর গণতান্ত্রিক হলে কে আসছে মনোনয়নে সেই অপেক্ষায় প্রার্থী ও সমর্থকরা।

১৯৯১ সালের পর থেকে নৌকার বিজয় ছিল না এ আসনে। তবে দশম জাতীয় নির্বাচনে ভোটহীন বিকাশে এমপি হন আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ রফিক। তাই এবারও যেকোনো মূল্যে আসন ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

আর দু’ভাগে বিভক্ত হলেও আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। কিন্তু জোটগত বা একক হোক বিএনপিকে ছাড় দিতে রাজি নয় জামায়াত। দলীয় প্রতীকে তারা নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্রভাবে লড়েও জয় পেতে পারে এমন বিশ্বাসেই জামায়াত এখানে প্রার্থী দেবে।

কারণ ২০০৮ সালে ৪ দলীয় জোট কিংবা দলের কঠিন মুহূর্তেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ। এ দুই দ্বীপ উপজেলাতেই জামায়াতের নীরব ভোট ব্যাংক রয়েছে, এ বিশ্বাসে তিনি এবারও নির্বাচনে লড়বেন।

আবার একক বা জোটগতভাবে হোক নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহও। তার সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রাপ্ত কবির আহাম্মদ সওদাগরও। তাই কে দলীয় সমর্থন পাচ্ছেন এটা শেষ পর্যন্ত দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মতে ভোটে জয়ের কল্পনাও করতে পারতেন না আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। এরপরও বিনাভোটে এমপি নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রের অনুকম্পা পেলেও তৃণমূল সংগঠিত করতে ব্যর্থ হন তিনি। তাই মহেশখালীতে লাখোকোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকলেও দলের ত্যাগী নেতারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীর মতো নিপীড়িত হয়ে আসছে। তাদের দমাতে সৃষ্টি করা হয়েছে নব্য আওয়ামী লীগার। মাঠে প্রশাসনিক প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে বিএনপি-যুবদলের স্বশস্ত্র ক্যাডারদের। এসব নিয়ে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও এমপি অনুসারীদের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে।

ফলে সরকার দলীয় এমপি হলেও ২০১৪ সাল থেকে চলমান সময় পর্যন্ত পুলিশ প্রহরা ছাড়া এলাকার ছোট-বড় কোনো অনুষ্ঠানে যেতে সাহস করেননি আশেক উল্লাহ রফিক। তার পারিবারিক আত্মীয় বিএনপির সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদসহ অন্যান্যদের নিরাপদে রাখতে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনে ঘণিভূত বেদনা নিরসনের চেষ্টাও চালানো হয়নি। ফলে দলের ভেতর একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী বেড়েছে আওয়ামী লীগে এমনটিই অভিমত তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

সে সূত্রে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে আশেক উল্লাহ রফিকের পাশাপাশি মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, ২০০৮ সালে জামায়াত প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া নৌকার প্রার্থী ড. আনসারুল করিম, জেলার প্রথম শহীদ পরিবারে সন্তান মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হোছাইন ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ওসমান গণী ও আওয়ামী লীগের নারীনেত্রী ইসমত আরা ইসমু।

অপরদিকে বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মো. মাহফুজুল্লাহ ফরিদ, সাবেক সংসদ সদস্য কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী। আবার শোনা যাচ্ছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দেশে এসে নির্বাচন করতে পারলে তিনিই এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তবে এটি তার রাজনৈতিক ভাগ্যের উপর নিরভর করছে।
এছাড়া জোটগত ভাবে আসন বিন্যাস হলে এটি জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুল হক আযাদকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলেও ধারণা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি নেতাদের।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রমতে, কক্সবাজার-২ (২৯৫) মহেশখালী-কুতুবুদয়া আসনে একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১। এরমাঝে কুতুবদিয়ার ভোটারের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৪৬৫। আর মহেশখালীতে ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ ভোটার রয়েছে।

এফএ/এমএস

আরও পড়ুন