চোখ দিয়ে ক’দিন পরপরই রক্ত ঝরে রুমানার
রুমানা আক্তার শিফা (২৫) ভালো গান করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জিতেছেন স্বর্ণপদকও। বাবা-মা-ভাই-বোন মিলে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু একটি বিরল রোগে বদলে গেছে রুমানার জীবন।
দুই বছর আগে হঠাৎ শুরু হয় তার নাক-কান দিয়ে রক্ত ঝরা। এক বছর যেতেই দেখা গেলো মাথায় চুলের গোড়া দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। গত ২ মাস যাবৎ নতুন করে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। কখনও ৭ দিন, কখনও ১৫ দিন আবার কখনও ১ মাস পর পর রক্ত ঝরে। শুধু রোগ শনাক্ত করতেই ইতোমধ্যে ৪ লাখ টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি।
রুমানা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাও এলাকার মৃত হেকিম আলীর মেয়ে। ৪ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে রুমানা সবার ছোট। বাবা মারা গেছেন। ভাই-বোনেরা বিয়ে করে যার যার পরিবার নিয়ে আলদা। মাকে নিয়ে এখন সংসার চলে আমেরিকা প্রবাসী খালার সাহায্যে। সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপ কালে রুমানা জানান, ২ বছর আগে যখন তার নাক ও কান দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয় তখন সিলেটের ইবনে-সিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে কয়দিন থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হলে তিনি বাড়ি চলে আসেন। এর কয়দিন পর আবার শুরু হয় রক্ত পড়া। এভাবেই কখনও ৭ দিন পর, কখনও ১৫ দিন পর আবার কখনও ১ মাস পর পর রক্ত পড়তে থাকে।
এরপর নতুন করে চুলের গোড়া দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হলে ঢাকায় গিয়ে আবারো নতুন করে ডাক্তার দেখান। ডাক্তার টেস্ট করে কিছুই বুঝতে না পেরে কিছুদিন পর্যবেক্ষণে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক কারণে রুমানা আবার চলে আসেন নিজের বাড়িতে।
গত ঈদের কিছুদিন আগে শুরু হয় চোখ দিয়ে রক্ত পড়া। তখন আবারো ঢাকা যান এবং ডাক্তার দেখান। ডাক্তার তখন ভারতের মাদ্রাজে গেলে হয়ত চিকিৎসা মিলবে বলে জানান। গত দুই মাসে মোট ৩ জন ডাক্তারকে দেখিয়েছেন তিনি। তাদের সবার অভিমত ভারতের মাদ্রাজ গেলে হয়ত চিকিৎসা মিলবে।
কিন্তু পিতৃহীন রুমানা যেখানে মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সামর্থ তার নেই। তাই কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি এগিয়ে আসেন তাহলে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে হয়ত সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবেন এমনটাই আশা রুমানার।
রুমানা জানান, সবাইকে জানাতে চাইনি, তবুও জীবনের প্রয়োজনে জানাতে হচ্ছে। যদি সরকার বা কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আমার পাশে মমতার হাত নিয়ে দাঁড়ান তাহলে হয়তো এ জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারব।
রুমানার মা জানান, যেভাবেই হোক আমার মেয়েকে সুস্থ দেখতে চাই। দেশে বিত্তবান মানুষের অভাব নেই, তাদের মধ্যে একজন নিশ্চই আছেন যিনি এই অসহায় মায়ের ডাক শুনে তার সন্তানের পাশে দাঁড়াবেন।
রিপন দে/এফএ/এমএস