লাঙ্গল থেকে মুক্তি চায় নৌকা, স্বস্তিতে বিএনপি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের মনোনয়ন পেতে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ডজন খানেক মনোনয়ন প্রত্যাশী দৌড়ঝাঁপ করছেন। এদের মধ্যে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি সেলিম ওসমানের প্রচার-প্রচারণা বেশি।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করে প্রচার-প্রচারণা চালালেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রয়েছেন নিরব। এখানে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোন্দল থাকলেও শেষ পর্যন্ত সমঝোতার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে জোটের আসন ভাগাভাগির অপেক্ষা করতে হচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের।
তবে এবার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল থেকে মুক্তি চায় আওয়ামী লীগের নৌকা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা লাঙ্গলের প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করে এই আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জোর দাবি জানান।
পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেয়ার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে লবিং চালাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সেইসঙ্গে নৌকার পক্ষে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, এই আসনে জাতীয় পার্টির এমপি থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবহেলিত। দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও প্রভাব নেই তাদের। জাতীয় পার্টির এমপি বিএনপির নেতাদের নিয়ে রাজনীতি করেন এবং তাদের মূল্যায়ন করেন। জাতীয় পার্টির এমপির প্রভাবে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাজে বাধা দেয়া হয়। ফলে এবার লাঙ্গল থেকে মুক্তি চান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোহাম্মদ বাদল, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া।
এদিকে, এই আসন থেকে আবারও মনোনয়ন পেতে জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান আওয়ামী লীগের একটি অংশকে হাত করে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাইছেন। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি থেকে এবার সাবেক এমপি প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানও মনোনয়ন চাইছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে দেখা করে ভোটের মাঠে নেমেছেন পারভীন ওসমান। করছেন সভা-সমাবেশ।
একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ।
এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন বর্তমানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও সাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক এস এম আকরাম।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, আমরা চাই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হোক। জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পাক। তিনবার এমপি নির্বাচিত আবুল কালামকে এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমরা দেখতে চাই। তিনিই বিএনপির যোগ্য প্রার্থী। তবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। দলের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ বাদল বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ১৮ বছর ধরে অবহেলিত। আওয়ামী লীগের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে লাঙ্গলের লোকজন খাবেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তা চান না। আমরা এবার লাঙ্গল থেকে মুক্তি চাই। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অন্যদলের লোকজন প্রভাব খাটাবে এটা মেনে নিতে পারি না। জোটের কৌশল হলে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া অন্য জেলায় আসন বণ্টন করা হোক।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান মুখে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কথা বললেও বিএনপির লোকজন নিয়ে রাজনীতি করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কিসমত হাসেমের ভাই শওকত হাসেম শকুকে নিয়ে রাজনীতি করেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে কখনো এক হবে না আওয়ামী লীগ। অথচ জাতীয় পার্টির এমপি বিএনপি নেতাদের নিয়ে রাজনীতি করেন। তাই আমরা চাই এবার আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন করতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়া হোক।
মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/আরআইপি