গাইবান্ধায় গ্যাসের অভাবে দুর্ভোগ
উত্তরবঙ্গের প্রবেশমুখ বগুড়ায় পাইপলাইনের মাধ্যমে সর্বশেষ গ্যাস এসেছে ২০০৫ সালে। এরপর গাইবান্ধাসহ উত্তরের রংপুর বিভাগের আর কোনো জেলাতে দেয়া হয়নি গ্যাস সংযোগ।
ফলে গ্যাসের অভাবে গাইবান্ধায় গড়ে উঠছে না আশানুরূপ শিল্প-প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে না কর্মসংস্থান অপরদিকে দুর্ভোগে আছেন ব্যবসায়ী, সিএনজিচালক ও গৃহিণীরা।
বগুড়া থেকে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে রংপুর হয়ে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হলেও গাইবান্ধায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণের কথা শোনা যায়নি কখনো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগে বিতরণের জন্য ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডকে (পিজিসিএল) পাইপলাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, সিএনজি স্টেশন, শিল্প-বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালীতে গ্যাস বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বগুড়া থেকে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে রংপুর হয়ে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এর জন্য পাইপলাইন স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলেশন কোম্পানি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করে গত বছরের শেষের দিকে। এখন এই প্রকল্পটি একনেকে পাস হতে হবে। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে পাইপলাইন বসানোর পর গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
এদিকে, গ্যাসের অভাবে এই জেলায় আশানুরূপভাবে গড়ে উঠছে না শিল্প-প্রতিষ্ঠান। ফলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নও সাধিত হচ্ছে না। সেইসঙ্গে ঘটছে না শিল্পের বিকাশ। গ্যাস না পাওয়ায় বর্তমানে গাইবান্ধার সাত উপজেলার সহস্রাধিক সিএনজিচালককে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অপরদিকে ইঞ্জিনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সে সমস্যা দূর করতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সিএনজিচালকরা।
এছাড়া গৃহস্থালীর রান্নার কাজে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনে গৃহিণীরা ব্যবহার করলেও থেকে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কেননা দেশের বিভিন্ন স্থানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে অহরহ।
জেলার সিএনজিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে গাইবান্ধার সিএনজিচালকদের বগুড়ায় গিয়ে গ্যাস আনতে হচ্ছে। এতে করে সময় ব্যয় হওয়ার পাশাপাশি কমছে দৈনিক আয়। কেননা সড়কে যাতায়াতে যাত্রী ঠিকমতো পাওয়া যায় না আবার যাতায়াতে কিনে আনা গ্যাসও খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে টোল দিতে হচ্ছে ১১০ টাকা করে। ফলে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়তে হয় তাদের।
জিটিসিএলের বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, বগুড়া থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের একটি প্রকল্প একনেকে পাস করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি একনেকে পাস হলে টেন্ডারের পর পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এছাড়া গাইবান্ধায় গ্যাস সরবরাহের জন্য একটি অফটেক পয়েন্ট রাখা হবে। পরবর্তীতে সেখান থেকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ করতে পারবে।
রওশন আলম পাপুল/এএম/জেআইএম