একক আধিপত্য এনামুলের, চুপচাপ বিএনপি
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংসদীয় আসনগুলোতে জমে উঠেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক নেতা। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। তার দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। মনোনয়ন দৌড়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলেছেন তিনি। এনিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এনামুল হক।
তবে এই আসনে সরকারবিরোধী বিএনপির শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও নেই প্রার্থীদের মধ্যে। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ধীরে ধীরে নিরবতা ভাঙছেন বিএনপির মনোয়ন প্রত্যাশীরা।
এনামুল সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি জোটের মেয়াদে বাগমারা সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে বহুল আলোচিত ছিলো। সেই দুর্নাম ঘুঁচিয়েছে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এনামুল হক। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে তার। ফলে এই আসনে এনামুল হকের বিকল্প নেই।
তবে এনামুল বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার পর এনামুল জেএমবি-জামায়াত তোষণ করেছেন। তাদের এলাকায় নানানভাবে পুনর্বাসন করেছেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সরিয়ে জেএমবি-জামায়াতকে দলীয় পদ দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়েছেন দল থেকে।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এদের মধ্যে সান্টু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আজাদ তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই দুইজন ছাড়াও সম্প্রতি স্থানীয় ৯ নেতাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই বহিষ্কারের পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা এমপি এনামুল হক। প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করতেই এ কৌশল নেন তিনি। এ ঘটনার পর অনেকটাই সতর্ক তৃণমূল আওয়ামী লীগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩৬৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাগমারায় উপজেলা গঠিত ১৬ ইউনিয়ন নিয়ে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় এ উপজেলা নিয়েই একটি সংসদীয় আসন। এই আসনে ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালে নৌকা প্রতীকে এবং ’৮৮ ও ’৯১ সালে লাঙল প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেন।
এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি হন সাবেক সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বিগত সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এলাকায় জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার বক্তব্য দিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সেখানে ধানের শীষের প্রার্থী হন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল গফুর। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এনামুল হকের কাছে পরাজিত হন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এনামুল হক।
এই আসনে সাবেক এমপি আবু হেনা ও আব্দুল গফুর ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মকলেছুর রহমান মন্ডল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক প্রামাণিক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া এবং ড্যাব নেতা ডা. আশফাকুর রহমান শেলি। আবদুল গফুর, ডিএম জিয়া ও ডা. আশফাকুর রহমান শেলী ছাড়া বাকিরা এলাকায় যান কালেভদ্রে। তবে ভোটের সময় ঘনিয়ে আসায় এলাকায় যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডি এম জিয়া বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা নতুন মুখ চান। তাদের চাওয়া থেকে এবার সংসদীয় আসনে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। জনপ্রিয়তা বিবেচনায় দল মনোনয়ন দিলে এ আসনটি পুনরুদ্ধার হবে।
বাগমারায় বহিরাগতরা এসে সুবিধা করতে পারবেন না বলে মনে করেন বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল গফুর। তিনি বলেন, স্থানীয় হওয়ায় মনোনয়ন দৌড়ে তিনিই এগিয়ে।
তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই ধানের শীষের প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু। নিজের মনোনয়নের ব্যাপারেও আশাবাদী এই বিএনপি নেতা।
অন্যদিকে এমপি এনামুল হক এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আবাসন খাতে বড় ধরণের বিনিয়োগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। রয়েছে কোল্ডস্টেরেজও। বাবা-মায়ের নামে সালেহা-ইমারত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কাজও করেন এমপি।
মনোয়ন প্রত্যাশী তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তার। হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, স্কুলজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় জেএমবির বাংলা ভাই এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের লোকজন বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। এতো কিছুর পরও আমি দমে যায়নি। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর ভাষ্য, তিনিও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। পুরো উপজেলার মানুষ তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনিও নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।
তবে নিজের মনোনয়নের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত এমপি এনামুল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই নেতাকর্মীরা কাজ করবেন।
আরএআর/আরআইপি