ইলিশের হালি ৬০০ টাকা
তিন-চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তীরে ভিড়ছে আর নৌকা ঘিরে ভিড় করছে মানুষ। নৌকা থেকে জেলেরা হাঁক ছাড়ছে প্রতি হালি ৬০০ টাকা। তিন-চার হালি করে ইলিশ কিনে বাজারের থলে ভরছেন ক্রেতারা।
বুধবার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাইজ্জারচর এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। পাশাপাশি গোসাইরহাটের চরজালালপুর, চরজানপুর, কোদালপুর ৬নং ঘাট, কুচাইপট্টি, আবুপুর অংশে একইভাবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ আহরণ ও বিক্রি চলছে।
মা ইলিশ বিক্রির জন্য পদ্মা নদীর তীরে জাজিরা অংশে ১০টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। ওই স্থানগুলোতে দিন-রাত ইলিশ বিক্রি চলছে। জেলেরা নদী থেকে মাছ আহরণ করে তীরে এনে বিক্রি করছেন। জাজিরার পদ্মার তীরের অস্থায়ী ইলিশের হাটগুলো হচ্ছে- সফি কাজীর মোড়, কাইজ্জারচর, দুর্গারহাট, দুব্বাডাঙ্গা, পালেরচর, গরম বাজার, বাবুরচর, সিডারচর, নাওডোবা জিরো পয়েন্ট ও পাইনপাড়া।
ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলায় এখন মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। এ কারণে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে বর্তমা নে ইলিশের উপস্থিতি বেশি।
মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য সরকার ৭ অক্টোবর হতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে সকল ধরনের জাল ফেলা নিষেধ করেছে। এই ২২ দিন ইলিশ আহরণ, নদীতে জাল ফেলা, বিপনন, মজুদ, পরিবহন সম্পূর্ণ নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে মৎস্য আইনে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে ৭টি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযান পরিচালনা করছে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনের অভিযানে ৪৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৬০০ মিটার জাল, ২১টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ১০টি স্পিডবোট জব্দ করা হয়েছে।
কাইজ্জারচর, দুর্গারহাট, নাওডোবা জিরোপয়েন্ট, চরজালালপুর, চরজানপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ মাছ কিনতে শতশত মানুষ অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরপর জেলেরা নৌকা নিয়ে তীরে এসে মাছ বিক্রি করে আবার নদীর মাঝে ফিরে যাচ্ছেন। নদীতে শতশত নৌকা দিয়ে জেলেরা অবাধে মাছ শিকার করছেন। কোথায়ও প্রশাসনের কাউকে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি।
কাইজ্জারচর এলাকায় কথা হয় চাঁদপুরের ইব্রাহীমপুর এলাকার জেলে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্য সময় নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। অভাবের সংসার, একটু বেশি আয়ের আশায় পালিয়ে মাছ ইলিশ শিকার করছি।
মাছ কিনতে শরীয়তপুর থেকে কোদালপুর এসেছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয়কর্মী আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, এখানে সস্তায় ইলিশ পাওয়া যায় তাই কিনতে এসেছি।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, পদ্মা নদী বিরাট এলাকা। আমরা নিয়মিত পদ্মায় অভিযান চালাচ্ছি। তারপরও অসাধু জেলেরা সুযোগ বুঝে নদীতে যাচ্ছে মাছ শিকার করছে। জাজিরায় অবাধে মাছ আহরণ ও বিপননের তথ্য পেয়েছি। জাজিরা ও গোসাইরহাটে সার্বক্ষণিক অভিযান চালানো হবে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে জাজিরা উপজেলা প্রশাসন প্রতিনিয়িত অভিযান চালাচ্ছে। অবাধে মাছ আহরণ ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে নদীর ভেতর একটি টিম ও দুব্বাডাঙ্গা,পালেরচরে একটি মোবাইল টিম কাছ করছে।
ছগির হোসেন/আরএআর/আরআইপি