ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পদ্মায় নতুন কৌশলে ইলিশ ধরছে জেলেরা

ফেরদৌস সিদ্দিকী | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৭:৪৮ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে রাজশাহীর পদ্মায় কৌশলে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। ইলিশের বিচরণক্ষেত্র জেলার পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘায় প্রায় ৭ হাজার জেলে নেমেছেন ইলিশ শিকারে। মাঝে মধ্যে অভিযানে দু-একটি দল পাকড়াও হলেও বাকিরা থেকে যাচ্ছেন আড়ালেই।

যদিও মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, জেলেদের তারা ইলিশ শিকার থেকে বিরত রেখেছেন। এ নিয়ে জেলেদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে সরকারি চাল সহায়তা। তবে এই সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ সোমবার দিনভর জেলার পবা, বাঘা ও চারঘাটেও অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে পবার হরিপুর এলাকার পদ্মা থেকে ইলিশ শিকারের সময় ১০ জেলেকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪ হাজার মিটার কারেন্ট জাল।

অভিযানে ইলিশ পাওয়া যায় ১৫ কেজি। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল ইসলাম এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রত্যেক জেলেকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আদালতের নির্দেশে পুড়িয়ে ফেলা হয় জব্দকৃত কারেন্ট জাল। এছাড়া চারঘাট থেকেও ১৪ হাজার মিটার জাল জব্দ করে পুড়ানো হয়।

জেলা মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে, ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র রাজশাহীর এই চার উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৭ হাজার ৫৪৮ জন। এরমধ্যে পবায় ২ হাজার ৬৫৮ জন, গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৪৩৪ জন, চারঘাটে এক হাজার ১৪৯ জন এবং বাঘায় এক হাজার ৩৬০ জন।

এদের মধ্যে পবায় ৬৩১ জন, গোদাগাড়ীতে ৫৭৯ জন, চারঘাটে ২৭৯ জন এবং বাঘায় ৩১১ জন ২০ কেজি করে সরকারের চাল সহায়তা পেয়েছেন।

জেলা মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে, জেলেরা ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞাকালীন নদীতে নামবেন না। তবে এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি মৎস্য দপ্তর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে প্রত্যেককে চাল সহায়তার আওতায় নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে সামান্যই। তারপরও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জেলেদের ইলিশ আহরণ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে গত ৭ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই ৯ দিনে ব্যাপক চৎরপতা চালিয়েছে মৎস্য দপ্তর। এর মধ্যে ৯৯ অভিযানসহ সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। নিয়মিত মামলা হয়েছে একটি। এ সময় এক জেলেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ১৭০ মিটার জাল।

Rajshahi1

এ ক'দিনে ১৪ বার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে, ৬২ বার মাছ ঘাটে, ৫০১ বার মাছের আড়তে এবং ৪০৫ বার হাটে-বাজারে গেছে মৎস্য দপ্তরের নজরদারিতে থাকা দল।

এ সময় জেলার বাঘায় ২৭ কেজি এবং গোদাগাড়ীতে ৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো নিকটস্থ এতিম খানায় দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পুরো সময় ধরেই এই অভিযান চলবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ধরা পড়ছে রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার পদ্মায়। তবে প্রকাশ্যে নয়, লুকিয়ে-চুরিয়ে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা।

দিনের বেলায় ছোট ছোট দলে পদ্মায় নামছেন তারা। তবে সন্ধ্যার পর থেকেই সদলবলে নেমে পড়ছেন। ইলিশ শিকার চলছে রাতভর। ভোররাতে মা ইলিশ চলে আসছে তীরে। এরপর বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীদের ডেকে পানির দামে বিক্রি করছেন জেলেরা।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায়। অনেকটা প্রকাশ্যে এখানে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। সাইজ ভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড়শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকায়। ভোর হবার আগেই হয়ে যাচ্ছে বেচাকেনা। ক্রেতাদের একটি বড় অংশ স্থানীয় বাসিন্দা। পুলিশ কর্তা এমনকি প্রশাসনের কর্তারাও রয়েছেন ক্রেতাদের তালিকায়।

এমন বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদির। তিনি বলেন, গত বছর ব্যাপক অভিযান ছিল। এতে এবার কৌশল বদলে ফেলেছেন জেলেরা। তবে শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান শুরু করবে জেলা প্রশাসন।

অন্যদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামশুল আলম শাহ বলেন, মৎস্য দপ্তরের দল নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও অভিযানে অংশ নিচ্ছে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব। আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইলিশ গভীর জলের মাছ। কিন্তু এবার পদ্মায় প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে ইলিশের দেখাও মিলছে সামান্যই। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সময়ে ইলিশ শিকার বন্ধ রাখছে ইলিশের পরিমাণ বাড়বে। এ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চলছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/এমএস

আরও পড়ুন