দেয়াল টপকে স্কুলে যায় মৌটুসি
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মৌটুসি। প্রতিদিন মই বেয়ে অন্যের পাকা দেয়াল টপকে রাস্তায় ওঠে। আবার তাকে বাড়ি ফিরতে হয় দেয়াল বেয়ে। দেয়াল টপকাতে গিয়ে দুই-তিনবার পায়ে আঘাত পেয়েছে সে। তবুও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেনি। প্রতিবেশীরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়াল তোলায় এক বছর ধরে অবরুদ্ধ মৌটুসির পরিবার।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা সদরের পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়ার দরিদ্র কৃষক মাহফুজুর রহমান। ৪৮ শতাংশ জমির সাড়ে ২১ শতাংশের ওপর তার নিজের বাড়ি। এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাস করছেন। প্রতিবেশীরা দেয়াল তোলায় ও বাড়ি নির্মাণ করায় প্রায় এক বছর ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
নিজের বাড়ির ভেতরে বাঁশের মই বেয়ে অন্যের দেয়াল টপকে তার পরিবারের লোকেরা আসা-যাওয়া করে। তার বসতঘরের পূর্ব দিকের ২৫ ফুট দূর দিয়ে সরকারি পাকা রাস্তা।
প্রতিবেশী সাইদুর রহমানের জমির আইল দিয়ে রাস্তায় উঠে তারা। এ জমির মালিক রাস্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কৃষকের বসতবাড়িসহ জমির ওপর নজর পড়ে সাইদুর রহমানের।
সস্তায় জমি কেনার কৌশল হিসেবে প্রথমে কৃষকের রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি রাখার গ্যারেজ তৈরি করে। গত বছর গ্যারেজসহ গোটা জমি বিক্রি করে দেয়। এ সময় রাস্তার জমি কেনার চেষ্টা করে পরিবারটি। কিন্তু ব্যর্থ হয়। বাড়ির পূর্বদিকে বর্তমান মালিক সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক প্রসাদ বিশ্বাস তার জমিতে দেয়াল তুলেছেন। অপর অংশে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জীবন বিশ্বাস আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দক্ষিণে সোনাতন নামে আরেক প্রতিবেশী দেয়াল তুলেছেন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে কৃষক মাহফুজুর রহমানের পরিবার।
এরপর থেকে গত এক বছরে রাস্তা পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র, থানা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কমপক্ষে ১২ বার সালিস নিয়ে গেছেন এই কৃষক। সবাই সালিস করেছেন। প্রতিবারই রাস্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জমির মালিকেরা। কিন্তু শেষ অবদি আর রাস্তা পায়নি কৃষক পরিবার।
মৌটুসির বাবা কৃষক মাফুজুর রহমান জানান, প্রতিবেশী সাইদুর রহমান জমি কেনার সময় তাকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে কৃষকের বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন সাইদুর। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাস্তা বন্ধ করে সেখানে গাড়ি রাখার গ্যারেজ করা হয়। এ সময় থেকে কৃষক রাস্তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করে। হঠাৎ জমি বিক্রির ঘোষণার কথা শোনার পর জমি কেনার জন্য প্রস্তাব দেন কৃষক মাফুজুর। কিন্তু প্রভাবশালীরা রাস্তা না দিয়ে অন্যত্র জমি বিক্রি করে দেন। নতুন মালিকদের সঙ্গে আপস করে রাস্তা পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু পরে রাস্তা পাওয়া হয়নি তার। অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে কমপক্ষে ১২ বার সালিস ডেকেছেন। প্রতিবারই সালিস হয়েছে। রাস্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও রাস্তা পাননি এই কৃষক।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কুমারখালী শাখার ব্যবস্থাপক প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, ওই কৃষককে রাস্তা দেয়া হবে না। প্রয়োজনে আরও প্রভাবশালী লোকের কাছে জমি বিক্রি করে দেব। তবুও তাকে রাস্তা দেব না।
অন্য প্রতিবেশী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জীবন বিশ্বাস জানান, সর্বশেষ জমি বিক্রির সময় মাফুজুর রহমানকে রাস্তার জমি কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই কৃষক তাদের অপমান করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার থানায় অভিযোগ করেছেন। তাকে রাস্তা দিলে তিনি আর বাড়িতে বসবাস করতে পারবেন না বলে জানান।
খোকসা পৌরসভার মেয়র তারিকুল ইসলাম বলেন, কৃষক মাফুজুর শুধু অভিযোগ করেছেন কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চাননি। তিনি চাইলে অনেক আগেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যেত। আমি ঢাকায় আছি। এবার ফিরে গুরুত্ব দিয়ে রাস্তার সমস্যা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।
আল-মামুন সাগর/এএম/জেআইএম