ফেনী-৩ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি
আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ফেনী-৩ আসনে। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলে থাকা আসনটি দখল করতে চায় আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের ডজন খানেক স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতা সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। সরব রয়েছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও।
শেষ পর্যন্ত নৌকা ও ধানের শীষের টিকিট কারা পাচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে এ আসনের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে মাঠে থাকলেও বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলে আগ্রহী নেতারা এখনও সেভাবে মাঠে নামেননি। বিগত নির্বাচনে মহাজোটের শরীক দল রিন্টু আনোয়ারকে এ আসনে মনোনয়ন দিলেও আওয়ামী লীগ প্রবাসী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী রহিম উল্যাহ’র কাছে টেকেনতি তিনি। বিপুল ভোটে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সোনাগাজী ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-৩ আসনটি। জাতীয় সংসদের ৩শ’টি আসনের মধ্যে এটির অবস্থান ২৬৭ নম্বরে। আসটির আয়তন ৪০৪ দশমিক ৯৮ বর্গকিলোমিটার। এ আসনের ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯৫৬ জন। এদের মধ্যে এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৭৭ জন পুরুষ ও এক লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৯ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আক্রাম হোসেন হুমায়ুন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী লিপটন, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম ও জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন সরব রয়েছেন।
এ ছাড়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীও আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের টিকিটে নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করছেন বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৌদি আরবের জেদ্দা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রহিম উল্যাহ, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানও (বিকম) এ আসনে দলের মনোনয়ন চান বলে দলীয় সূত্র জানায়।
দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে থাকা এ আসনে দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাছির উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন।
জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমেদ ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের নিজ এলাকা হওয়ায় তাদের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার, আসম রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, দলের নেতাদের মধ্যে যাকে সুখে-দুঃখে কাছে পাওয়া যাবে, সব সময় দলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখবেন, এমন নেতাকে মনোনয়ন দিলে সবাই এক হয়ে কাজ করবে।
ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক রিন্টু আনোয়ার বলেন, দল আমাকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে দল যদি জোটের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা করে তখন আমি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে গতবারের মতো ফেনী-৩ আসনটির জন্য জোর দাবি জানাব।
তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করছি।
জহির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকার সময় থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দলের যেকোনো ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে গিয়েছি। অন্যদিকে সোনাগাজী, দাগনভূঁঞার সাধারণ মানুষের পাশেও ছিলাম। তাই এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি শতভাগ আশাবাদী।
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, আমার জন্ম আওয়ামী লীগ পরিবারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বলিষ্ঠ সৈনিক আমি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে আমি বেশ কিছু জনকল্যাণমূলক কাজ করেছি। আমার সামাজিক সংগঠন ‘স্বপ্ন সাজাই’-এর পক্ষ থেকে দেশীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি নিয়ে ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ফেনী ছাড়াও ‘নৌকা’র বিজয়ের জন্য আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করে যাব। আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব, তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।
এমএএস/জেআইএম