শূন্য উপহারের পর্দা নামছে এবার
রাজশাহী নগরীর একমাত্র সিনেমা হল ‘উপহার’ বন্ধ হয়ে গেছে ১১ অক্টোবর মধ্যরাতেই। ‘নাকাব’ চলচ্চিত্রের মধ্যদিয়ে ৪৩ বছরের দীর্ঘ যাত্রার ইতি টানলো উপহার। শেষ প্রদর্শনীও ছিল হাউসফুল। ঘটা করে অনেকেই এসেছিলেন সেদিন বড় পর্যায় শেষবারের মতো সিনেমা দেখতে। ফেরার পথে অনেকেই অতীতের স্মৃতিচারণ করে গেছেন। অনেকের কণ্ঠে ঝরেছে আকুতি।
১৯৭৪ সালে স্নিগ্ধা নামে পর্দা ওঠে উপহারে। মাঝখানে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৮৫ সালে ‘অন্যায় অবিচার’ প্রদর্শনী দিয়ে ‘উপহার’ নামে যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে বহু সিনেমা প্রেমীর বিনোদন যুগিয়েছে এই হলটি।
২০১২ সাল থেকে উপহার সিনেমা হলের ডিজিটাল প্রজেকশন ব্যবস্থাপনায় ছিলো বৃহত্তম চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া। শনিবার দুপুরের পর প্রজেকশন যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে স্থাটি।
সিনেমা হলটিতে গিয়ে দেখা যায়, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্মীরা যন্ত্রাংশ গোছগাছ করছেন। ওই সময় সিনেমা হলের সামনের বিলবোর্ড সরিয়ে নেন কর্মীরা।
কথা হয় জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রজেকশন প্রকৌশলী আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১১ অক্টোবর রাত ১২টায় সিনেমার প্রদর্শনী শেষ হয়েছে। পরদিন সকাল থেকেই যন্ত্রাংশ সরানোর কাজ শুরু হয়। তিনজন কর্মী শনিবার দুপুরের মধ্যেই কাজ শেষ করে।
সিনেমা হলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি দর্শকশূন্য আসন। তখনো আলো ছড়াচ্ছে রুপালী পর্দা। প্রজেকশন যন্ত্রাংশ সরানো হয়েছে আগেই। অপারেটর কক্ষে তালা। বাইরে তখন পিনপতন নীরবতা। রীতি ভেঙে শুক্রবারও পর্দায় ওঠেনি নতুন সিনেমা। আসেনি দর্শকও।
খাঁ খাঁ করা হলে কবে থেকে পর্দা নামছে সেটি জানাতে পারেননি হলের কর্মীরা। তবে এখানে আর প্রদর্শনী হচ্ছে না এটা নিশ্চিত করেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রজেকশন প্রকৌশলী আজাদুর রহমান আজাদ।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ীক মন্দায় চলছিলো সিনেমা হলটি। একারণে সেটি বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। এর আগে একই কারণে একে একে রাজশাহীর অলোকা, উৎসব, বর্ণালী ও লিলি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়।
কথা ছিলো, নগরবাসীর বিনোদন নিশ্চিত করতে রাজশাহী সিটি ভবনের জায়গায় নির্মাণাধীন সিটি সেন্টারে হবে আধুনিক সিনেপ্লেক্স। ৩৬ মাসের এই প্রকল্পটির কাজও চলে ৯ বছর ধরে। তবে বাণিজ্যিক এই ভবনে সিনেপ্লক্সের স্পেস বরাদ্দ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ব্যবসায়িক স্বার্থে এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছুই বলছে না ভবনটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
তবে আগামী এক বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। আর নগরবাসীর বিনোদনের কথা মাথায় রেখেই চুক্তি অনুযায়ী ভবনে সিনেপ্লেক্স রাখার কথা জানান তিনিও।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/এমএস