ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আ.লীগের কোন্দলকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

আহমেদ নাসিম আনসারী | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সংশ্লিষ্টদের কপালে। আর এ সুযোগেই বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত এ জেলার চারটি আসন আবার পুনঃউদ্ধার করতে চায় দলটি। এছাড়া জাতীয় পার্টির দু’একজন প্রচারণা চালালেও সীমান্ত এ জেলার ভোটের লড়াইটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ-১

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে প্রচারণায় নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ব্যানার, ফেস্টুন আর বিভিন্ন দিবসে নিজের সরব উপস্থিতি জানান দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন তারা।

তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভিযোগ তুলে সরাসরি মাঠে না থাকলেও ভেতরে ভেতরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এদিকে জাতীয় পার্টির পক্ষে এখানে দলের এক নেত্রী প্রচারণায় নেমেছেন।

গত ৩টি সংসদ নির্বাচনে পরপর এই আসন থেকে পরাজিত বিএনপি এবার জয়ী হতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে আর আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছে আসনটি ধরে রাখা।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ-১ আসন অর্থাৎ শৈলকুপা উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন।

১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল ওহাব এবং ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক মৎস্য ও প্রানী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কল্পনা আক্তার, প্রিয়াংকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান সজলসহ আরো দু’একজন প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওহাব, বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড প্রচারণায় নেমেছেন।

ঝিনাইদহ-২

ঝিনাইদহ জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সদর উপজেলার একাংশ ও হরিনাকুন্ডু উপজেলা নিয়ে ঝিনাইদহ-২ আসন গঠিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলেও আসনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু হেরে যান স্বতন্ত্র তরুন প্রার্থী তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমির কাছে। দলের মধ্যে কোন্দলের কারণেই যে এমন পরিস্থিতি তা অকপটে স্বীকার করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে জামায়াতের ভোটব্যাংক থাকায় এই আসনটি বিএনপি তাদের ঘাঁটি হিসেবে মনে করলেও কোন্দলের কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে দলটি।

এ অবস্থায় উভয় দলেরই একটি অংশ চায় নতুন মুখ। তবে নতুন হোক পুরাতন হোক ভুল-ত্রুটি আর কোন্দল মিটিয়ে উভয় দলে শেষ পর্যন্ত যোগ্য প্রার্থী আসবে বলে মনে করছে নেতারা।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার ২টি পৌরসভা এবং ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-২ আসন গঠিত। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭শ ৩৯ জন।

সরজেমিনে গিয়ে জানা যায়, আসনটিতে মূলত লড়ায় হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। এখানে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পরপর ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী মশিউর রহমান। এছাড়া ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শফিকুল ইসলাম অপু ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাহজিব আলম সিদ্দিকী বিজয়ী হন।

আসনটি বরাবরই বিএনপি তাদের ঘাঁটি হিসেবে মনে করে। তবে দলটির একক প্রভাবশালী নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং দুদকের মামলায় নিন্ম আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি মশিউর রহমান পলাতক থাকায় দলের একটি অংশ নতুন মুখ খুঁজতে শুরু করেছে। আরেকটি অংশ বলছে মশিউর রহমানই তাদের প্রার্থী, এখানে বিকল্প কেউ মনোনয়ন পাবে না।

১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটিতে প্রার্থী করা হয় আওয়ামী লীগের এক সময়কার হেভি ওয়েট নেতা নূর এ আলম সিদ্দিকীকে। তবে দু’বারই তিনি পরাজিত হন। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে প্রার্থীতায় কৌশল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ নতুন মুখ হিসেবে নিয়ে আসে শফিকুল ইসলাম অপুকে। আর তিনিই পরাজিত করেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মশিউর রহমানকে। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম অপু মনোনয়ন পেলেও নূর এ আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি দলটির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ। সবমিলিয়ে দলটির মধ্যে স্পষ্ট কোন্দল রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নতুন-পুরাতন অনেকেই এখন রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে।

এদের মধ্যে আছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, রেডিয়্যান্ট ফার্মাসিউটিক্যালের পরিচালক নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহূল এবং বিএনপি থেকে মীর লাভলু।

ঝিনাইদহ-৩

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৩ সংসদীয় আসন। আসনটিতে জামায়াতের প্রচুর ভোট থাকায় বিএনপি এটিকে সম্ভাবনাময় আসন হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে গত দুটি সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও দলীয় কোন্দল গলার কাটা হতে পারে আওয়ামী লীগের জন্য।

আসনটিতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। ব্যানার-ফেস্টুন আর সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় ভোটার আর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও মাঝে-মধ্যে সভা সমাবেশ করছে। দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এছাড়া আসনটিতে প্রচারণায় নেমেছেন জাতীয় পার্টির এক সম্ভাব্য প্রার্থী।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কোটচাঁদপুর আর মহেশপুর এ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৩ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৫৮।

ঝিনাইদহ-৩ আসনে (মহেশপুর ও কোটচাদপুর) আওয়ামী লীগের পক্ষে যারা প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন তার মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চল, শাহজাহালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী এবং মায়া তালুকদার, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এমএম জামান মিল্লাত, সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং কোটচাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুননেছা মিকি, অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান প্রিন্স এবং রেজাউল করিম টিটন।

অপরদিকে এই আসনে বিএনপির পক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহসম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কোটচাদপুর থানা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এবং মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. মোমিনুর রহমান মমিন ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান রনির নাম শোনা যাচ্ছে।

এছাড়াও জামায়াতের পক্ষ থেকে জামায়াতের সুরা সদস্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। জামাতের ভোট ব্যাংক কাজে লাগিয়ে বিএনপি আসনটিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে।

এছাড়া ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি আব্দুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণায় নেমেছেন।

ঝিনাইদহ ৪

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা ও সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন গঠিত। বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে বড় দুই দলেরই রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রচার-প্রচারণায় মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ তবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মামলাসহ নানা কারণে এলাকাছাড়া।

এই আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পরপর ৩ বার বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজম আনার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ-৪ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২২ জন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি এবং কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও যুবলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের।

অপরদিকে বিএনপি থেকে যাদের নাম পাওয়া গেছে তার মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও বিএনপির নেতা হারুন অর রশিদ মোল্লা রয়েছেন।

এফএ/জেআইএম

আরও পড়ুন