আজও রান্না হয়নি শেখ হাসিনার দেহরক্ষী মাহাবুবের বাড়িতে
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হবে জেনে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ করে দেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নিহত মাহাবুব রশিদের বাবা-মা।
বুধবার সকাল থেকে এক প্রতিবেশীর বাড়ির ছোট একটি টেলিভিশনের সামনে নাতিকে বুকে নিয়ে বসে ছিলেন নিহত মাহাবুব রশিদের মা হাসিনা খাতুন ও অসুস্থ বাবা হারুন অর রশিদ। আজও তাদের বাড়িতে রান্নাবান্না হয়নি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মাহাবুব রশিদের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। ঘাতকদের ছোড়া গ্রেনেড আর বুলেটের আঘাতে মাহাবুব সেদিন নিহত হন।
১৪ বছর আগে ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচারের রায় শুনবেন বলে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন তারা। এ সময় প্রতিবেশীরা তাদের কিছু খাবার দিলেও খাননি। যখন টেলিভিশনে রায়ের খবর শুনলেন তখন হুহু করে কেঁদে ফেলেন। কোলে বসে থাকা নাতিও তখন তাদের কান্নায় কেঁদে ফেলে। তাদের কান্নায় কাঁদে প্রতিবেশীরাও।
১৪ বছর ৪৮ দিন পর ছেলে হত্যার রায় ঘোষণা হলেও রায়ে পুরোপুরি খুশি হতে পারেননি তারা। রায়টি একটি দৃষ্টান্ত হবে বলে আশা করেছিলেন সন্তানহারা এ বৃদ্ধ বাবা-মা। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।
নিহত মাহাবুব রশিদের মা হাসিনা খাতুন বলেন, আশা ছিল সব আসামির ফাঁসি হবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখে মরতে চাই। ফাঁসির রায় কার্যকর হলে খুনি ও তার পরিবার বুঝবে মায়ের বুক খালি করার কষ্ট। আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরছি। ১৪ বছর ধরে কাঁদছি। এবার আমাদের কান্না কিছুটা কমবে। ছেলে হত্যার বিচার পেয়েছি বলে অন্তত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারব।
মাহাবুব রশিদের অসুস্থ বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, সাংবাদিকদের মুখে রায় হওয়ার খবর শোনার পর থেকে গত দু’দিন আমাদের বাড়িতে রান্নাবান্না হয়নি। বড় মেয়ে তার বাড়ি থেকে কিছু খাবার এনেছে। সবাইকে বলেছি, আজকের রায়ে আমরা বিচার না পেলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেব। ছেলে হত্যার রায় শুনে মনে স্বস্তি এলে বাড়ি গিয়ে ভাত খাব। তবে রায়ে আমরা পুরোপুরি খুশি হতে পারিনি। তবুও আদালত যে রায় দিয়েছে আমরা সেটিকে সম্মান করি। রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়। মরার আগে যেন ছেলের খুনিদের ফাঁসি দেখে যেতে পারি এ আমার চাওয়া।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।
বুধবার এ মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত।
পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এ মামলার আসামি ১১ সরকারি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আল-মামুন সাগর/এএম/এমএস