আমরা যেভাবে মরছি তারাও যেন ধুঁকে ধুঁকে মরে
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল বুধবার। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
সেদিন আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। পাশাপাশি আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী।
তাদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন। তারাসহ নিহতদের স্বজনরা বিচারের অপেক্ষায় আছেন ১৪ বছর।
আগামীকাল ওই মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে বিচার পাবেন বলে আশা করছেন গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে আজীবন পঙ্গুত্ববরণকারীদের একজন তৎকালীন ঢাকা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাভারের মাহবুবা পারভীন। উপজেলার জালেশ্বর এলাকায় ভাড়া বাসায় স্বামী আবুল মাসুদ ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন তিনি।
মাহবুবা পারভীন বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছি। আমার সুন্দর জীবনকে যারা অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে, তাদের শাস্তি দেখে যেন পৃথিবীর মানুষ ভয়ে আঁতকে ওঠে। যারা পরিকল্পনাকারী তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রের সে সময়কার যেসব কর্মকর্তা ওই ঘটনায় জড়িত তাদেরও বিচার করা উচিত।
সেদিনের গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর জ্ঞান ফেরে মাহবুবার। বেঁচে ফিরলেও আজও তার শরীরে রয়ে গেছে ১৮০০টি স্প্লিন্টার। ১৪ বছর ধরে শরীরে বিঁধে থাকা স্প্লিন্টারগুলোর ব্যথাসহ নানা শারীরিক যন্ত্রণা তাকে যেন প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাতে ঘুম হয় না। কোনো কাজ করা তো দূরের কথা, সিঁড়ি বেয়ে উঠা-নামা করাও সম্ভব হয় না।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত রায় পেতে যাচ্ছেন- এমন সংবাদে উচ্ছ্বসিত মাহবুবা পারভীন। অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা ও চোখে-মুখে থাকা বিষাদের ছাপ নিমেষেই সরে গিয়ে ন্যায়বিচার পাওয়ার বাসনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তিনি।
তার দাবি, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত তারেক রহমানকে দেশে এনে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে। হামলায় আহত হয়ে আমরা যেভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তারেককেও ধুঁকে ধুঁকে মারার মতো শাস্তি দিতে হবে। তাহলে মৃত্যুর আগে আমরা একটু শাস্তি পাব।
চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়। শুরু থেকেই নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে নানা চেষ্টা করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে তদন্ত শুরু করে। বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য।
২০০৮ সালের জুনে বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই তাজউদ্দিন, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
গ্রেনেড হামলা মামলায় জীবিত ৪৯ আসামির মধ্যে আছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু। তাদের সবার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
আল-মামুন/এএম/এমএস