তোর কোন বাপ আছে নিয়ে আয়
সাধারণত ছেলেরা উত্ত্যক্ত করলে মেয়েরা মুখ বুজে তা সহ্য করে চলে আসে। লোকলজ্জা কিংবা বখাটেদের হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না মেয়েরা।
কিন্তু এবার উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারে। এমন ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মৌলভীবাজারের সাহসী কন্যা ফাতেমা আক্তার অ্যানি।
রাস্তায় বখাটে এক ছেলে অ্যানিকে মন্দ ভাষায় উত্ত্যক্ত করে এবং তার ছবি তোলে। এরপর অ্যানি ছেলেটির হাতের মোবাইল কেড়ে নেয়। সেই সঙ্গে তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
এ সময় ওই বখাটের বন্ধুর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সাহসী কন্যা অ্যানি পাল্টা জবাব দেয়, ‘তোর কোন বাপ আছে নিয়ে আয়, সে আমাকে কী করবে দেখি।’
উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে ব্যতিক্রম এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজার পৌর পার্কে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, উত্ত্যক্তের প্রতিবাদকারী মেয়েটি মৌলভীবাজার দি ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। তার নাম ফাতেমা আক্তার অ্যানি। সে সদর উপজেলার মাতারকাপন একালার মো. আকলিম মিয়ার মেয়ে।
অ্যানিকে উত্ত্যক্তকারী ছেলেটির নাম এবাদুর রহমান জিসান। তার বাড়ি সদর উপজেলার বারন্তি গ্রামে। সে শাহ মোস্তফা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা আক্তার অ্যানি জানায়, টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে মায়ের সঙ্গে পৌর পার্কে বসে ফুচকা খাচ্ছিলাম। এ সময় জিসান নামের ওই ছেলেটি আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। সেই সঙ্গে আমার ছবিও তোলে। আমার মা এর প্রতিবাদ করলে খারাপ আচরণ করে জিসান। তাই বখাটে জিসানকে শিক্ষা দিতে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে পার্কের বাইরে নিয়ে যাই।
এ সময় জিসানের সঙ্গে থাকা তার বন্ধুদের একজন ছাত্রলীগের এক কথিত নেতাকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলায় তার হাতের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলি। সেই সঙ্গে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলি, ‘তোর কোন বাপ আছে নিয়ে আয়, সে আমাকে কী করবে দেখি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দি ফ্লাওয়ার্স কেজি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, ফেসবুকে ভিডিওটি দেখে ঘটনার পরদিন আমরা অ্যানিকে স্কুলে ডেকেছিলাম। তখন অ্যানি জানায়, তাকে উত্ত্যক্ত করায় তার মা প্রতিবাদ করেছিল। মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছে অ্যানি। ঘটনার পর পুলিশ এসে ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামের সামনে দুই পক্ষের সমঝোতা হলে মুচলেকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেয় তার পরিবার।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জিসান জানায়, ঘটনার দিন পৌর পার্কের পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমাকে ডেকে নিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে এবং আমার বন্ধুর মোবাইল ভেঙে ফেলে অ্যানি। সেই সঙ্গে আমাকে লাঞ্ছিত করে। অ্যানি আমার প্রেমিকা। তার সঙ্গে আমার এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রায় আট মাস আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় অ্যানি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে আমার অফিসে ডেকে নিয়ে আসি। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিষয়টি মীমাংসা করে দেই।
রিপন দে/এএম/আরআইপি