ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

অবশেষে ৪০ বছর পর ভাত খেলেন তিনি

প্রকাশিত: ০৮:২৫ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৫

দীর্ঘ ৪০ বছর পর অবশেষে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ভাত খেলেন ঈশ্বরগঞ্জের জাটিয়া ইউনিয়নের কুমারলি গ্রামের বঙ্গবন্ধু প্রেমিক হারুন সালেহ রতন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার রক্তমাখা দৃশ্যকে বুকে ধারণ করে বিগত ৪০ বছর যাবত ভাত না খেয়ে নীরব প্রতিবাদী হয়ে বেঁচে ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক হারুন সালেহ রতন।

প্রচারবিমুখ এই মানুষটি আজো শিউরে ওঠেন ১৫ আগস্ট ভয়াল রাতের রক্তমাখা স্মৃতিকে ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ষাটোর্ধ্ব এই সৈনিক রতন ভাতহীন বেঁচে আছেন শুধুমাত্র তরল খাবার খেয়ে। যা ছিল ময়মনসিংহবাসীর কাছে আশ্চর্য্যের। তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য প্রতিবাদী এই মানুষটির মুখে ভাত তুলে দেয়ায় জেলা প্রশাসনের নিকট সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ভাত বা দাঁনা (শক্ত) জাতীয় খাবার না খেয়ে শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে হারুনের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার খাদ্যনালী শুঁকিয়ে গেছে এবং ফুঁসফুঁসে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুচিকিৎসা প্রয়োজন।

এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন জানায়, ঈশ্বরগঞ্জের জাটিয়া ইউনিয়নের কুমারলি গ্রামের হারুন সালেহ রতন ৭৪ সালে মেট্রিক পাস করে কলেজে পড়াশুনা করতেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার খবর পরদিন শুনতে পেরে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুপ্রেমী এই হারুন। সর্বদাই শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের রক্তাক্ত লাশের দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে তার।


দিনরাত নির্ঘুম টগবগে যুবক হারুন ছুটে বেড়ান এদিক-সেদিক। ভাত খেতে বসলেই, ১৫ আগস্টের সেই রক্তমাখা দৃশ্য তাকে আবেগ-আপ্লুত করে তোলে। গলা দিয়ে যেন ভাত নামতে চায় না। আর খেলেও পরক্ষণেই বমি হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিবাদী হয়ে বেঁচে আছেন শুধু মাত্র তরল খাবার খেয়ে (ভাতের মাড়, শরবত, চা ও জুস)।

এ ব্যাপারে হারুন সালেহ রতন আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে জানান, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ভালোবাসি। ষড়যন্ত্র করে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের এতোগুলো মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। সেইদিনের রক্তাক্ত দৃশ্য এখনো আমাকে কাঁদায়, আবেগ-আপ্লুত করে তোলে। সেই সময় আমার মুখে ভাত দিলেই বমি হয়ে যেতো। কিছু খেতে বসলেই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্তাক্ত দৃশ্য আমাকে কাতর করে ফেলতো। খেতে পারতাম না। পরিবারের লোকজনের আদেশ-নির্দেশ সত্ত্বেও ভাত পেটে যায়নি। আর সেই থেকে ভাত না খাওয়ার ব্রত নিয়ে প্রতিবাদী হই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হয়ে।

তিনি বলেন, অামি কোনোদিন প্রচার চাইনি। নীরব ব্রতই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি দেবে।

জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জানান, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর থেকেই ঈশ্বরগঞ্জের হারুন সালেহ রতন ৪০ বছর যাবত ভাত খান না, এমন খবর আমাকে বিস্মিত করে তোলে। বিষয়টি জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেই। এরপর বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু প্রেমিক হারুনের ব্রত ভাঙতে ওই এলাকায় যাই এবং তার মুখে ভাত তুলে দেই।

আতাউল করিম খোকন/বিএ