মাঠ দখলে ব্যস্ত আ.লীগ, বিএনপি আদালত পাড়ায়
সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল রাজনীতিতে। মাঠ দখলে ব্যস্ত সময় পার করছেন আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীরা। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারছে না বিএনপি। গত ১০ বছরের সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন আদালত পাড়ায়।
দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় জাতীয় পার্টি। একক না মহাজোটে নির্বাচন করবে সেটির জন্য অপেক্ষা করলেও কেউ কেউ একক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাঠে নেই জামায়াত। প্রত্যক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না চললেও পরোক্ষভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণার খুব বেশি প্রভাব নেই রাজনীতিতে।
সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আ.লীগের এমপি প্রার্থী রয়েছে অর্ধশতাধিক। এছাড়া জাতীয় পার্টির ৫ জন, বিএনপির ৪ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন, জাসদের দুই। স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা ব্যানার ফেস্টুনে নিজেকে তুলে ধরছেন ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া)
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। শরীক নিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে জটিলতা। তবে একক প্রার্থী বিএনপির। রয়েছে জামায়াতের প্রার্থীও।
বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট করে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এবারও অংশ নিতে চান নির্বাচনে। তবে, সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী জট রয়েছে ক্ষমতাসীন আ.লীগের। এখানে মনোনয়নের লক্ষে কাজ করছেন একাধিক প্রার্থী।
এরা হলেন, জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আ.লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব, তালা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি শেখ নূরুল হক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা তরুণ সংগঠক কামরুজ্জামান সোহাগ, জেলা মহিলা আ.লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি। এ আসনে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত। মাঠে রয়েছেন জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু।
তবে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব দলটির একক প্রার্থী। যদিও একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলটির পক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্যাহ।
এ আসনে তালা উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫৬ জন। কলারোয়া উপজেলায় এক লাখ ৮২ হাজার ২২৯ জন ভোটার। দুই উপজেলা মিলিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৫ জন।
সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা)
স্বাধীনতার পর চার বার এ আসনে জামায়াত প্রার্থী জয়লাভ করে। অন্যান্য প্রার্থীরা একবার করে জয়লাভ করে। সাতক্ষীরা দুই আসনটি জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। নবম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের দূর্গে হানা দেয় মহাজোটের প্রার্থী এম.এ জব্বার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪২ জন।
আ.লীগ থেকে মনোনয়নের জন্য গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহম্মদে রবি, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এসএম শওকত হোসেন, দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক এরতেজা হাসান জজ। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসান।
এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মতলুব হোসেন লিওন। জামায়াতের প্রার্থী সাবেক এমপি খালেক মন্ডল মানবতা বিরোধী অপরাধে বর্তমানে জেলে আটক রয়েছেন। তবে তার পরিবর্তে কেউ জামায়াতের প্রার্থী হবেন কীনা সেটি জানা যায়নি। প্রকাশ্যে কোনো প্রচারনা নেই কোনো প্রার্থীর।
সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা-আশাশুনি ও কালিগজ্ঞ উপজেলার আংশিক)
২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৩ জন। এ আসন থেকে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক আ.লীগ ও মহাজোটের হয়ে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় আ.লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন তিনি। এবারও মনোনয়নের জন্য মাঠে কাজ করছেন। এ আসনটিতে মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাপ করছেন ড. আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ। এছাড়া আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, বিএনপি থেকে মাঠে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম। এছাড়া এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হাফেজ রবিউল বাশার। জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি স.ম সালাউদ্দিন।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগজ্ঞ উপজেলার আংশিক)
শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসন। এখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন একাধিক প্রার্থী।
এ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন বর্তমান এমপি শ্যামনগর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এস.এম জগলুল হায়দার, সহ-সভাপতি আনিসুরজ্জামান আনিস, সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন ও কালিগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী আলাউদ্দীন।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোড়ল আব্দুস সাত্তার।
জামায়াতের প্রার্থী রয়েছেন জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম। তিনি এ আসন থেকে দুইবার সংসদ নির্বাচিত হন। এছাড়া জাসদের (ইনু) রয়েছেন অধ্যক্ষ অশোক এলাহী।
সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার ৪টি আসনে আ.লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সবাই দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাছাড়া সদর আসন থেকে আমি নিজেও সংসদ প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন সাতক্ষীরার ৪টি আসনের দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের জন্য কাজ করবে।
জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, সাতক্ষীরার চারটি আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছে। নির্বাচন একক না মহাজোটগতভাবে হবে সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দলীয়ভাবে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি বা গণসংযোগ অব্যাহত রয়েছে।
তবে বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীল কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, দলের নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশি হয়রানী রয়েছে। তবে জেলার চারটি আসন থেকেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত হলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তারা।
আকরামুল ইসলাম/এমএএস/পিআর