ঝালকাঠিতে আমুর বিপরীতে বিএনপির ডজন খানেক প্রার্থী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন ঝালকাঠির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। তাদের সমর্থকরা আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন। সব মিলিয়ে ঝালকাঠির নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম।
ঝালকাঠি সদর এবং নলছিটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-২ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন প্রবীণ নেতা ও বর্তমান সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তার দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। জেলার নেতাকর্মীরাও তাকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ। তার বিপরীতে বিএনপি থেকে ডজন খানেক নেতা মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আসনের দুটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়নের সবখানেই এখন চলছে নির্বাচনী আলোচনা। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শহরের রেস্টুরেন্ট এবং পার্কের আড্ডায় আলোচনার বিষয় একটাই- আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে। নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে; নির্বাচন কি আদৌ নিরপেক্ষ হবে! এনিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। নির্বাচনকে ঘিরে মাঠেও নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই তারা দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন। এক দিকে নিজের সমর্থন আদায়ের জন্য নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন, তেমনি মনোনয়ন পেতে লবিং শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ভিপি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা মনিরুল ইসলাম নুপুর, সিনিয়র সহ-সভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া, পাকিস্তান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদের মেয়ে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য জেবা আহমেদ খান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অ্যাডভোকেট রফিক হাওলাদার, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা যুবদল সভাপতি এম কামরুল ইসলাম এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম।
বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে ২০ দলের মনোনয়ন চাইবেন জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম দলীয় হাতপাখা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির (জাপা, এরশাদ) চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএ কুদ্দুস খান, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন আনু এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ, ইনু) জেলা সভাপতি সুকমল ওঝা দোলনও জোটের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি, রব) জেলা সাধারণ সম্পাদক সমীরণ হালদার একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা
ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসন গঠিত। এ আসনের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। রাজনীতির মাঠে বড় দলগুলোর নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে জোর লবিং চলছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। যারা মনোনয়ন চাইছেন তাদের সমর্থকরা আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন। সব মিলিয়ে এ আসনের ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি উপজেলা এখন নির্বাচনী আলোচনায় সরগরম।
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইসমাইল এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির (জেপি,মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাতীয় পার্টি (জাপা, এরশাদ) থেকে কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপি থেকে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও এ আসনের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, ২০০৮ সালের শাহজাহান ওমরের অনুপস্থিতিতে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রফিকুল ইসলাম জামাল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা গোলাম আজম সৈকত, লন্ডন প্রবাসী জাতীয়তাবাদী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করীম। জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি, রব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি সোহরাব হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কায়েদ সাহেব হুজুরের নাতি মালয়েশিয়া প্রবাসী ফয়জুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হয়। প্রথম সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-রাজাপুর নিয়ে গঠিত আসনে আমির হোসেন আমু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ সংসদে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যমতের সরকারে যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আবার ২০০১ সালের অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের (বীরউত্তম) কাছে হেরে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ২০০১ সাল পর্যন্ত আটটি সংসদ নির্বাচনে সাতবারই এ আসনে আওয়ামী লীগকে হারতে হয় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে।
দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বজললুল হক হারুন নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে আসে। যদিও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ওই সময়ে দলে নবাগত রফিকুল ইসলাম জামাল ঠিকমত মাঠে দাঁড়াতেই পারেননি। তখন পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ন বিএনপির বিপক্ষে। ২০০১ সালে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে প্রথমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে এলাকায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। গত নবম এবং দশম সংসদ নির্বাচনের পর রাজাপুর-কাঁঠালিয়াবাসী কোনো মন্ত্রী পাননি। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক চেস্টা চালাবে, আর বিএনপি তাদের হারানো রাজ্য উদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আরএআর/পিআর