ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পুলিশ সুপারের উদ্যোগে পরিবার ফিরে পেল নারগিস

জেলা প্রতিনিধি | চাঁদপুর | প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নারগিসকে হারানোর শোকে ৮ বছর আগেই মারা গেছেন মা। আর ১২ বছর অপেক্ষার পর বাবার বুকের উষ্ণ মমতা ফিরে পেলেন নারগিস আক্তার মনি। তাইতো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মেয়ে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির নারগিসের পরিচয় খুঁজতে সাত্তার নামে ১২ জনকে খুঁজে আনেন। অবশেষে নারগিসের বাবা সাত্তারের সন্ধান পান।

চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়েই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারগিসকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা এলাকার আব্দুর সাত্তার ছৈয়ালের মেয়ে নার্গিস। বাড়ির সবাই আদর করে মনি বলে ডাকতো। দূরন্ত আর উচ্ছল নারগিসের দিনগুলো ভালোই কাটছিল। বাবা হতদরিদ্র কৃষক। আট সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসারে কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না বাবা।

Nargis

অবশেষে এক প্রতিবেশীর কথামতো রাজধানীর এক ধনী পরিবারের কাছে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হয় নার্গিসকে। তখন তার মাত্র বয়স ৯ বছর। কিন্তু কয়েক মাস না পেরোতেই ওই পরিবারের নির্যাতন শুরু হয় নার্গিসের ওপর। একরাতে সুযোগ বুঝে ওই বাসা থেকে পালিয়ে যায় সে।

উদ্দেশ্য ছিল সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে সোজা নিজের বাড়িতে চলে আসবে। কিন্তু পথে আরেকজনের হাতে পড়ে নার্গিস। এভাবে কয়েকটি পরিবারের কাছে নার্গিসের আশ্রয় মিললেও নির্যাতনের হাত থেকে যেন রেহাই নেই।

কিন্তু ভালো সময়ও আসে তার জীবনে। তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন বাগেরহাট পৌসভার এক কাউন্সিলর। তিনি ঢাকায় বসবাসরত তার এক আত্মীয়ের কাছে তুলে দেন অসহায় মেয়েটিকে।

তারপর দীর্ঘ একযুগ। এখন নার্গিসের বয়স ২২ বছর। পরিবারটি যখন জানতে পারে নার্গিসের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে তখন তারা চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরের মাধ্যমে নার্গিসের বাবা-মায়ের সন্ধান চান। মাত্র মাস দেড়েক আগেই চাঁদপুরে যোগ দিয়েছেন জিহাদুল কবির।

পুলিশ সুপারের নির্দেশ মতে চাঁদপুর সদন থানার ওসি (তদন্ত) মাহাবুবুর রহমান মোল্লা তথ্য নেন নার্গিসের কাছ খেকে। তিনি ছুটে যান চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণাঘাট এলাকায়।

auto

সেখানে ইউপি সদস্য হাসান শেখের সহায়তায় মোট ১২ জন সাত্তারকে হাজির করা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। কিন্তু ফল হয়নি। এদের কেউই তার সন্তান হারিয়েছে বলে দাবি করেননি। তবে হাল ছড়েননি পুলিশ সুপার।

আবারও ওসিকে (তদন্ত) হরিণাঘাটে পাঠান। তবে এবার সন্ধান মিলেছে আরেক সাত্তারের। যিনি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বসতবাড়ি নদীতে ভেঙে যওয়ায় মেঘনা নদীর পশ্চিমে জেগে ওঠা নতুন চরে বসবাস করছেন তিনি। সেখানেই যান ওসি মাহাবুবুর রহমান।

এই সেই সাত্তার যার সন্তানের খোঁজ নেই কবে থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে নিয়ে হাজির করা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। মোবাইল ফোনে ভিডিওকলের মাধ্যমে বাবা-মেয়েকে কথা বলিয়ে দেয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।বাবা-মেয়ের কান্নায় অনেকের চোখে পানি চলে আসে। তারপর বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা থেকে আনা হয় নার্গিসকে। ফিরিয়ে দেয়া হয় পরিবারের কাছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জাগো নিউজকে জানান, ১২ বছর পর নারগিসকে তার হারানো পরিবারের কাছে তুলে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।

ইকরাম চৌধুরী/এফএ/এমএস

আরও পড়ুন