শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজসেবক, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদানকারী জাতীয় বীর শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে ২২ দল হরতালের আহ্বান করে। ওইদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মিছিলে শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ নেতৃত্ব দেন। ওই সময় কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনাস্থালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এ উপলক্ষে কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে শহীদ ময়েজ উদ্দীন স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ অর্পণ। সাড়ে ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও কাঙালি ভোজ। দুপুর ১টা ১০মিনিটে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু সংলগ্ন দেওপাড়া গ্রামে মেহের আফরোজ চুমকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মিলাদ মাহফিল। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলার সকল ইউনিয়ন এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে দোয়া মাহফিল ও কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ ১৯৩০ সালে ১৭ মার্চ বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছুরত আলী, মায়ের নাম শহরবানু। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বাবা। ময়েজউদ্দিন আহমেদ ঐতিসাহিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিলের’ আহ্বায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে ওই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।
ময়েজউদ্দিন আহমেদ উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফপিএবি) মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের জয় হয়। শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাধারণ জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মানুষ হিসেবে ইতিহাসে এবং মানুষের হৃদয়পটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়
আব্দুর রহমান আরমান/আরএ/আরআইপি