ভাইকে বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের আকুতি
বড় ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গণমাধ্যম অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ছোট বোন শামসুন নাহার রুমা। ছোটবেলায় যে ভাইয়ের হাত ধরে বড় হয়েছেন তিনি সেই ভাই গত ৪ বছর ধরে কিডনি সমস্যায় পড়ে আছেন বিছানায়।
যে ভাই প্রতিনিয়ত স্কুলে ও টিউশনিতে পৌঁছে দিয়েছেন বোনকে এবং কী চলার পথে বখাটেদের হাত থেকে বীরের বেশে রক্ষা করছেন সেই বীর এখন যুদ্ধ করছেন নিজের সঙ্গে।
ভাইয়ের এমন অবস্থায় থমকে গেছে তাদের পুরো পরিবার। পরিবারের উপার্জনসক্ষম মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ৪ বছর ধরে তাদের মাঝে নেই কোনো ঈদ ও উৎসবের আনন্দ।
ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় কোনো মতে তাদের সংসার চললেও বাড়ি ভাড়া বকেয়া পড়েছে দীর্ঘদিনের। এমন অবস্থায় বাড়িওয়ালাও চাপ সৃষ্টি করছেন বাড়ি ছাড়ার। সব মিলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। অবশেষে কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে ভাইকে সুস্থ করে তুলতে নিজে মাঠে নেমেছেন মুক্তিযোদ্ধার এই সন্তান।
সোমবার বিকেলে অসুস্থ ভাই মনজুরুল হাসানের চিকিৎসার সমস্ত কাগজপত্র ও প্রমাণসহ জাগো নিউজের কার্যালয়ে আসেন শামসুন নাহার রুমা। সঙ্গে নিয়ে আসেন বাবার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রও। রুমার অনুরোধ জাগো নিউজে তার ভাইকে নিয়ে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশ করলে হয়ত তাদের পরিবারটির দিকে সুদৃষ্টি দেবে সরকারসহ হৃদয়বান মানুষগুলো।
রুমা জানান, ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা বাবা আব্দুল হাকিম হাওলাদার (সনদ নং ম-১৫০৭৬২) মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব পড়ে বড় ভাই ৩৬ বছর বয়সী মনজুরুল হাসানের ওপর। স্ত্রী, দুই সন্তান, মা, দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়ে তিনি থাকেন রাজধানীর মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকায়। যৌথ পরিবার তাদের। ব্যবসার পাশাপাশি প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধা বাবার ভাতা পেয়ে বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার।
২০১৩ সালে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মনজুরুল হাসান। বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখানোর পর জানতে পারেন তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তার জানান, দ্রুত প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ অবস্থায় রাজধানীর শ্যামলীর ৩ নম্বর রোডে অবস্থিত সিকেডি নামক একটি কিডনি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে ডায়ালাইসিসসহ বিভিন্ন চিকিৎসা চলতে থাকে তার।
৪ বছর এভাবে চলার পর অবশেষে চলতি বছরের ২৭ জুলাই ওই হাসপাতালেই মা মমতাজ বেগমের একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় ছেলের শরীরে। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরও বর্তমানে মা ও ছেলে ওই হাসপাতালের ডাক্তার কামরুল ইসলাম ও রেজাউনুর রহমানের অধীনে চিকিৎসাধীন।
জাগো নিউজকে রুমা বলেন, মা, ভাইয়াকে কিডনি দেয়ার পর নিজেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ডাক্তার বলেছেন, মা ও ভাইয়াকে দুই বছর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা নিতে হবে। এজন্য প্রতিমাসে তাদের পেছনে ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যা আমরা কোনোভাবেই জোগার করতে পারছি না। আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস এখন বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে ১০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, অনেক দিন হলো বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় প্রতিনিয়ত বাড়ি ছাড়ার জন্য বলছেন মালিক। এক দিকে বাড়ি ছাড়ার চাপ, অন্যদিকে মাত্র ১০ হাজার টাকায় এতগুলো মানুষের ঠিকমতো খাওয়াই হয় না, সেখানে মা ও ভাইয়ের চিকিৎসা করাবো কীভাবে?
রুমা বলেন, গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে যেসব সম্পতি ছিল সেগুলো বিক্রি করে ভাইয়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছি। এখন আর বিক্রি করার মতো কিছুই নেই আমাদের।
তিনি বলেন, শুনেছি সরকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু আমরা ভাতা ছাড়া কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই মুহূর্তে সরকারের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন আমাদের। এখন আমাদের সংসারের যে অবস্থা এভাবে আর দুই মাস চললে আমরা সবাই না খেয়ে ও মা-ভাই বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।
রুমার ভাই মনজুরুল হাসানকে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৬৩১-৯৫২৬৫৯ (বিকাশ) অথবা ০১৯১৮-২০৩৭০৩ নম্বরে। সহযোগিতা পাঠাতে পারেন, মনজুরুল হাসান, হিসাব নং ১১৪.১৫১.১০৯৫০৪, ডাচ বাংলা ব্যাংক, মহাখালী শাখায়।
এমএএস/আরআইপি