ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে যত কথা

জেলা প্রতিনিধি | রাঙ্গামাটি | প্রকাশিত: ১০:৫৫ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাহাড়ের রাজনীতিতে দিন দিন যেমন ঘটছে পরিবর্তন ঠিক তেমনি ইতিহাসে প্রতি বাঁকে বাঁকে ঝরছে রক্ত। একাত্তরের পর থেকেই পাহাড়ে নিয়মিতভাবে রক্ত ঝরেছে। নিজেদের অধিকার আদায়ে শান্তি বাহিনী গঠনের মাধ্যমে গেরিলা আক্রমণ শুরুর পর পাহাড়ে রক্তযুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধ প্রতিনিয়ত রূপ পরিবর্তন করে এখনও চলছে। তবে এখন অধিকার আদায় কিংবা গেরিলা আক্রমণ নয়; নিজেদের আধিপত্য লড়াইয়ে একে-অন্যকে প্রতিনিয়ত খুন করছে। এতে দিন দিন পাহাড়ের মানুষের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব।

স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে পার্বত্য আসনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। পরে যদিও সেই সময়ের স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) বাকশালে যোগ দেন। কিন্তু ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা জাতির জনককে হত্যার পরপরই সারাদেশের মতো বদলে যেতে শুরু করে পাহাড়ের রাজনীতিও।

পাহাড়ের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে এমএম লারমার নেতৃত্বে গঠিত হয় সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন শান্তিবাহিনী। ১৯৭৬ সালে বরকলে টহল পুলিশের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এই সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন। সংগঠনটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য বিশ্বস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকায় সশন্ত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে।

শান্তিবাহিনীর অব্যাহত সশস্ত্র হামলার মধ্যেই তৎকালীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার তৎপরতাকে রুখতে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই সমতল থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভূমিহীন এবং দরিদ্র বাঙালিকে পুনর্বাসন করেন পাহাড়ে।

এতে বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা কমলেও জটিল আকার ধারণ করে ভূমিবিরোধ। নতুন সমস্যা হিসেবে সামনে আসে ভূমিবিরোধ। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশাল ভূখণ্ড হলেও এখানে বসবাস এবং চাষ উপযোগী জমির পরিমাণ কম। তার ওপর ১৯৬০ সালে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের কারণে প্রায় এক লাখ একর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যবহারযোগ্য ভূমির পরিমাণ আরও কমেছে। ফলে নতুন করে পুনর্বাসন পাহাড়ে জটিলতা বাড়ায়, বাড়ে মানবিক সঙ্কটও। সেইসঙ্গে শান্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় প্রাণ হারাতে থাকেন দারিদ্র্য পুনর্বাসিত বাঙালিরা।

এক সময় এই বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে পাহাড়ে বাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। শান্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্য বাঙালির প্রাণ হারানোর ঘটনায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাহাড়িদের ওপর ক্ষুব্ধ বাঙালিদের হামলার ঘটনাও বাড়তে থাকে। ক্রমশ নষ্ট হতে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালির সম্পর্ক।

আগে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিন জেলা একটি জেলা ছিল। কিন্তু এই সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই আশির দশকের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পৃথক তিনটি জেলায় রূপান্তর করা হয়। শুরু হয় নতুন তিনটি প্রশাসনিক জেলার।

১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর শান্তিবাহিনীর একটি অংশের হাতে নিহত হন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও জুম্ম জাতীয়তাবাদের জনক হিসেবে পরিচিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা)। তার মৃত্যুর পর দায়িত্ব নেন তারই ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। অব্যাহত থাকে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ।

এসব আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলো পুনর্বাসিত বাঙালি গ্রাম, সেনাবাহিনী-পুলিশ-আনসার সদস্যরা। শান্তিবাহিনীর হামলায় ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঠিক কতজন বাঙালি কিংবা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মারা গেছেন তার সঠিক কোনো সংখ্যা না প্রকাশিত হলেও বিভিন্ন গবেষকরা এই সংখ্যাকে অন্তত দশ হাজার বলে দাবি করে থাকেন। এদের মধ্যে সবচে বড় ঘটনাটি ছিলো বরকলের ভূষণছড়ায় একরাতেই চারশ জন বাঙালিকে হত্যার ঘটনা। একই সময় জাতিগত জিঘাংসায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত এক হাজার সাধারণ পাহাড়ি মানুষ। তবে দুটি ক্ষেত্রেই কোন বিশ্বস্ত কিংবা দায়িত্বশীল সূত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি।

শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র তৎপরতা চলমান থাকা অবস্থাতেই এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। সেই সময় বেশকিছু শান্তিবাহিনী সদস্য আত্মসমর্পণ করে এবং গঠন করা হয় স্থানীয় সরকার পরিষদ। কিন্তু বন্ধ হয়নি শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতা।

এরশাদের পরে বিএনপি সরকারের আমলেও শান্তিবাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় সংলাপ। এই সংলাপে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অব) অলি আহমেদ।

তবে পাহাড়ের সঙ্কট সমাধানে আলোচনার পথে সংগঠনটি পা বাড়ান দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। শুরু হয় আলোচনা বৈঠক। মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি।

খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রায় দুই হাজার সশস্ত্র বিদ্রোহী শান্তিবাহিনীর সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন সন্তু লারমা। চুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। স্থানীয় সরকার পরিষদের বদলে হয় পার্বত্য জেলা পরিষদ।
আত্মসমর্পণকারী শান্তিবাহিনীর সদস্যদের প্রায় ৮শ জন ফিরে যান সরকারি চাকরিতে। বাকিদের নানাভাবে পুনর্বাসন করা হয়। শান্তিবাহিনীর রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে তৎপরতা শুরু করে।

অন্যদিকে বিএনপি-জামাত এবং বাঙালিভিত্তিক সংগঠনগুলো চুক্তির বিরোধিতা করে নানান কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়া চুক্তির বিরোধিতা করে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে চুক্তিকে কালো পতাকা দেখিয়ে জনসংহতি সমিতির সহযোগী ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের একটি অংশ গঠন করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার পরাজিত হলে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। থমকে যায় বাস্তবায়ন কার্যক্রম। চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।

২০০৬ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই সরকারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে দায়িত্ব পান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়। সেই সময়ই ভাঙন দেখা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে।

শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফের মধ্যে যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত চলছিলো তাতে নতুন করে যুক্ত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)। সংগঠটির কেন্দ্রীয় নেতা রূপায়ন খীসা, তাতিন্দ্রলাল চাকমা পেলে, সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বে ২০১০ সালে গঠিত হয় পাহাড়ের নতুন আরেকটি আঞ্চলিক সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)’।

ত্রিপক্ষের বিরোধ আরো বেড়ে যায়, এ সময় প্রাণ হারায় আঞ্চলিক দলের অনেক নেতাকর্মী। একই সময়ে পাহাড়ের এই তিন আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং অপহরণ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। যদিও তারা সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে আর আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়নি জনসংহতি সমিতি। তারা নিজেরাই প্রার্থী দেয় এবং পরাজিত হয়। কিন্তু এই নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক বিরোধ শুরু হয়, যা এখনো চলমান। বিশেষত এই বিরোধের মূল কারণ হয়ে ওঠে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং ভূমি বিরোধ।

সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন জনসংহতি সমিতির নিজস্ব প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার। আবার উপজেলা নির্বাচনে রাঙ্গামাটির দশটি উপজেলার মধ্যে ছয়টি এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টিতেই বিজয়ী হয় আঞ্চলিক দলগুলো।

তবে অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলোর রাজনৈতিক এই তৎপরতা ও ভূমি বিরোধের কারণে সংশয়ে আছে পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙালিরা। ভূমি কমিশনের কার্যক্রমের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়তে হবে এমন আশঙ্কায় ইতোমধ্যেই বাঙালি সংগঠনগুলোর ডাকে একাধিকবার হরতাল অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

আঞ্চলিক তিন দলের মধ্যে জেএসএস (এমএন লারমা) সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস থেকে বেরিয়ে আসার ফলে প্রথমে ইউপিডিএফ ও জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকলেও তা আধিপত্য বিস্তারসহ নানান কারণে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি।

এরই মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউপিডিএফ (প্রসিত) ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) মধ্যে বন্ধুত্ব যখন শত্রুতায় রূপ নিচ্ছিল তখনই সন্তু লারমার নেতৃত্বধীন পর্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস)’র চিরশত্রু প্রসিত খীসার নেতৃত্বধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়।

১৯৯৭ সালের পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দুই সংগঠনের পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত ১ হাজার নেতাকর্মী নিহত হলেও এই বিরল সমঝোতার পর আর কোনো সংঘাত হয়নি দুই পক্ষের। এই নতুন সমঝোতার কারণে ইউপিডিএফ (প্রসিত) সঙ্গে তার পুরনো বন্ধু জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) দূরত্ব আরো তৈরি হতে থাকে।

পরবর্তীতে গত ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ (প্রসিত) থেকে বহিষ্কৃত ও বেরিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের একটি অংশ তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বে পৃথক ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) নামে পৃথক আরেকটি দল গঠন করে। নতুন এই দলটির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে পর্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) দলের। ফলে পাহাড়ের রাজনীতিতে আসে নয়া মেরুকরণ।

আঞ্চলিক চারটি দলে রূপান্তরিত হয় পাহাড়ের মানুষ। বিরল এক সমঝোতার মাধ্যমে যখন সন্তু লারমার নেতৃত্বধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-সন্তু) ও প্রসিত খীসার নেতৃত্বধীন ইউপিডিএফ (প্রসিত)’র সর্ম্পক বন্ধুত্বে রূপ নেয় ঠিক তখনই পুরনো এই দুই সংগঠন থেকে বেরিয়ে যাওয়া আলাদা আরো দুই সংগঠন তপন জ্যোতি বর্মা নেতৃত্বধীন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বধীন জেএসএস (এমএন লারমা) মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। নয়া এ মেরুকরণের পর থেকে পাহাড়ে ইউপিডিএফ (প্রসিত) নেতাকর্মীদের ওপর শুরু হয় একের পর এক হামলা। বিভিন্ন হামলায় ইউপিডিএফ (প্রসিত) দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মিঠুন চাকমাসহ আরো অনেকে নিহত হন।

একদিকে নানিয়ারচরে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমা চাকমার ওপর ক্ষোভ অপরদিকে তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে থাকা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কর্মীদের হাতে একের পর এক নেতাকর্মী হত্যার জন্য তপন জ্যোতি চাকমার ওপর ক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপের। এর মধ্যেই গত মার্চ মাসে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের শীর্ষ দুই নেত্রী দয়াসোনা চাকমা ও মন্টি চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তপন জ্যোতি চাকমার ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। দীর্ঘ প্রায় এক মাস এক দিন পরে এই দুই নেত্রী মুক্তি পান। এ সকল ঘটনার কারণে শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি চাকমা হয়ে ওঠে ইউপিডিএফ (প্রসিত)’র মূল শত্রু।

এর ফলে চলতি বছরের ৩ মে নিজ অফিসের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে। এর ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফ (প্রসিত)’র অন্যতম শত্রু তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাকে। এ ঘটনায় যদিও দুই নেতার দুই সংগঠন থেকে ইউপিডিএফকেই (প্রসিত) দায়ী করা হয়েছে কিন্তু ইউপিডিএফ (প্রসিত) দায় অস্বীকার করেছে।

এ সব বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অমলেন্দু হাওলাদার বলেন, পাহাড়ের মানুষ আগে সকলে মিলে শান্ত পরিবেশে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাস করতো। কিন্তু দিন দিন পাহাড়ে আলাদা হওয়ার প্রবণতা ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার’র সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, পাহাড়ের সুন্দরতম পরিবেশকে দিনে দিনে বিষাক্ত করে দিচ্ছে কিছু মহল। সম্প্রীতির এই পাহাড় এখন শত্রুতায় রূপান্তরিত হয়েছে। নিজেদের মধ্যকার কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির কারণে এ দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।

পাহাড়ে ১০ মাসে ৩৭ খুন

পাহাড়ের রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে বছরের পর বছর হাজারো মানুষ মারা গেলেও গত বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড় ছিলো শান্ত। কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে আবারো পাহাড়ে শুরু হয় অস্থিরতা। গত ১০ মাসে পাহাড়ে আবারো ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে সর্বশেষ গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাণ যায় ৩৭ জনের। এরমধ্যে আঞ্চলিক তিন সংগঠনের লোক ৩২ জন।

এফএ/এমএস

আরও পড়ুন