জসিমের পাশে সৈয়দ মহসিন আলী ফাউন্ডেশন
৯ বছর আগে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলখুড়া ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের একটি পা ইনফেকশনের কারণে কেটে ফেলতে হয়। তখন প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এক লাখ ২০ হাজার দিয়ে তার চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন জসিমের ডান পাও কেটে ফেলতে হবে। বর্তমানে সৈয়দ মহসিন আলী না থাকলেও তার পাশে দাঁড়িয়েছে সৈয়দ মহসিন আলী ফাউন্ডেশন।
গত ৩ মে ‘টাকার জন্য পা কাটাতে পারছেন না জসিম’ এই শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জসিমের কষ্টের বিষয়টি নজরে আসে প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ মহসিন আলী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দ মহসিন আলীর মেয়ে সৈয়দা সানজিদা শারমিনের। তিনি এ বিষয়ে আলাপ করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মৌলভীবাজার সদর আসনের এমপি সৈয়দা সায়রা মহসিনের সঙ্গে।
তার সম্মতিতে সৈয়দা সানজিদা শারমিন বৃহস্পতিবার বিকেলে অসুস্থ জসিমের বাড়িতে গিয়ে তার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন এবং সৈয়দ মহসিন আলী ফাউন্ডেশন জসিমের চিকিৎসা করাবে বলে জানান। আগামী রোববার থেকে জসিমের চিকিৎসা শুরু হবে। এ সময় সৈয়দা সানজিদা শারমিন জসিমের মায়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন এবং তাদেরকে নতুন কাপড় উপহার দেন।
অসুস্থ জসিম উদ্দিন জানান, অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি কখনও সিএনজি কখনও টমটম চালাতেন। তার আগে রিকশাও চালিয়েছেন। সব মিলে ভালোই চলতো তাদের সংসার। এর মধ্যে বিয়ে করেন তিনি। দুই বছর পর তার ঘর আলো করে আসে একমাত্র ছেলে শাহীন আহমেদ। ছেলের বয়স এখন ৯ বছর। ছেলের জন্মের এক বছর আগে জমিতে কাজ করতে গিয়ে কাদার নিচ থেকে কিসের যেন আঘাত লাগে তার বাম পায়ের আঙুলে। সেই আঘাতের কারণে ওই স্থানে ঘা হয়ে যায় তার। এক বছর পর পুরো পায়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে যায় তার। শুরু হয় প্রচণ্ড জ্বালা-যন্ত্রণা। রাতের পর রাত তিনি কান্নাকাটি করে কাটিয়েছেন। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন পা কেটে ফেলতে। পায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় তার পরিবার। এ অবস্থা দেখে সন্তানকে ফেলে বাবার বাড়ি চলে যায় তার স্ত্রী।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি জানার পর প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী তাকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। সেই টাকায় পায়ের চিকিৎসা করান তিনি। কেটে ফেলা হয় তার বাম পা। এরপর সুস্থ হয়ে ওঠেন। এবার এক পা দিয়েই সংসারের হাল ধরেন তিনি। শুরু করেন টমটম চালানো। এতে প্রতিদিন ৩০০/৪০০ টাকা আয় হতো তার। মা ও সন্তানকে নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু গত এক বছর ধরে আবারও তার ডান পায়ে শুরু হয় যন্ত্রণা। দিন যত বাড়ে, যন্ত্রণাও বাড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় তার আয় উপার্জন। এরই মধ্যে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ডান পা কেটে ফেলতে হবে। এখন আর চিকিৎসা করানোর মতো কোনো টাকা নেই তার। তাই উপায় না পেয়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছেন।
জসিমের মা সুফিয়া বেগম মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চললেও ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে পারেন না। বর্তমানে অনিশ্চিত জীবন যাপন করছেন জসিম।
জসিমের মা বলেন, জানি না আল্লাহ কেন আমার ছেলেকে এই শাস্তি দিচ্ছেন। আমার জীবন নিয়েও যদি আমার ছেলেকে ভালো করে দিতেন। চোখের সামনে ছেলের এতো কষ্ট সহ্য হয় না।
জসিমের ব্যাপারে সৈয়দ মহসিন আলী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সানজিদা শারমিন বলেন, জসিমের ঘটনাটি জানার পর আমি আমার মা সদর আসনের এমপি সৈয়দা সায়রা মহসিনের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জসিমের চিকিৎসার দ্বায়িত্ব নিতে বলেন। সে কারণে জসিমের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্থ করেছি। আগামী রোববার থেকেই তার চিকিৎসা শুরু হবে।
রিপন দে/আরএআর/পিআর