ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে লেন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ফাঁদ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কের উত্তর পাশ দিয়ে আরেকটি লেন করা হবে। লোকমুখে এ কথা শুনে মহাসড়কের উত্তর পাশের জমির কয়েকজন মালিক সরকারের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফন্দিফিকির করছে। এ জন্য অনেক জমির মালিক তড়িঘড়ি করে মহাসড়কের পাশে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বহুতল পাকা ভবন ও কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মির্জাপুরের গোড়াই, দুল্যা, কুরনী ও দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইলসহ বিভিন্ন স্থানে এসব বাড়ি-ঘর নির্মাণে হিড়িক দেখা গেছে। টাঙ্গাইল ভূমি হুকুম দখল অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে এ ফন্দি ফিকির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ফোর লেন উন্নীতকরণ কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এজন্য গত ঈদুল আজহার ছুটিতে স্বাচ্ছন্দে মহাসড়ক দিয়ে ঘরে ফেরার জন্য ২৩টি ডাবল সেতু খুলে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ধেরুয়া এলাকায় উড়াল সেতুও খুলে দেয়া হয়েছিল। এ কারণে গত ঈদ মৌসুমে চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঈদের সেই চিরচেনা যানযট দৃশ্যমান হয়নি। দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়ক দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের হালকা যানবাহনের জন্য মহাসড়কের দক্ষিণ পাশ দিয়ে একটি লেনও তৈরি করার কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া ওইসব যানবাহন চলাচলের জন্য উত্তর পাশ দিয়ে আরেকটি লেন তৈরি করা হবে। এজন্য গত ২৪ এপ্রিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরেজমিন ভূমির ভিডিও ফুটেজ নিয়েছেন। তবে হুকুম দখল প্রক্রিয়া এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে ভূমি হুকুম দখল অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে লোকমুখে আরও ৮ ফুট হুকুম দখল করা হবে এ খবর শুনে অতিরিক্ত সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য মহাসড়কের পাশে কোনো কোনো স্থানে ভূমির মালিকরা তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাঁচা-পাকা বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এছাড়া কোনো কোনো এলাকায় ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন এমন লোকও ওই ভবনের ওপরে আবার একাধিক ছাদ নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনা গোড়াই এলাকায় ঘটেছে। ভিডিও ফুটেজ নেয়ার পর টাঙ্গাইল হুকুম দখল অফিসের কতিপয় সার্ভেয়ারদের যোগসাজসে সরকারি অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য ভূমি মালিকরা ফন্দি ফিকির করছে।
এলাকাবাসী জানান, গোড়াই মঈন নগর মৌজায় ২৬৬৩ ও ২৬৬৪নং দাগে নুরুল ইসলাম বিষু নামে এক ব্যক্তি প্রায় ৬শ ফুট এলাকা জুড়ে কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। একই এলাকায় ৫৫২নং দাগে দিপু চন্দ্র শীল, ইব্রাহীম, কলিম উদ্দিন, আলিম, আলতাব, কামরুজ্জামান, আবু বক্কর সিদ্দিকী, আয়শা বেগম, ৫৭৩নং দাগে সাইম উদ্দিন, রঞ্জিত সরকার, ফরিদ, শাহানাজ বেগম পাকা বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে দিপুর চন্দ্র শীল ১৬শ স্কয়ার ফুট ভবনের জন্য ২৩ লাখ ৬৫ হাজার ও রঞ্জিত সরকার ২৮শ স্কয়ার ফুট ভবনের জন্য ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। সরকার পুরো ভবনের ক্ষতিপুরণ দিলেও অধিগ্রহণে কিছু অংশ বাদ পরায় ভূমি মালিকরা হুকুম দখল অফিসের কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য ওই ভবনের ওপর আরও ছাদ তুলেছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। তবে এ অভিযোগের সম্পর্কে ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে মহাসড়কের মুনসুর দুল্যা এলাকায় আবু হোসেন ও কুরণী এলাকায় নুরু মিয়ার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম নিম্নমানের টিন দিয়ে কাঁচা ঘর তুলেছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মহাসড়ক ফোর লেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রকৌশলী অমিত চক্রবর্তী বলেন, মহাসড়কের পাশে ভূমির মালিকদের ১০ মিটারের মধ্যে স্থাপনা করা যাবে না জানিয়ে আগেই নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ভিডিও করা আছে। কাজেই এই গর্হিত কাজ যারা করছেন তারা সরকারি অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাবেন না বলে তিনি দাবি করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মির্জাপুর অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, ফোর লেন বলেন আর সিক্স লেন বলেন প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যাপারটি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দেখবাল করে থাকেন।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা হুকুম দখল কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, মহাসড়কের ওই পাশ দিয়ে আরেকটি লেন করা হবে বলে তিনি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত হুকুম দখলের জন্য কোনো নির্দেশনা আসেনি উল্লেখ করেন। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের পর জমি রক্ষা করার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের।
তাছাড়া হুকুম দখল অফিসের সার্ভেয়ারদের সহযোগিতায় ভূমি মালিকরা কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসের স্টাফ অফিস সময়ের বাইরে কে কোথাই কী করে তা আমার জানার বিষয় নয়।
এস এম এরশাদ/আরএ/আরআইপি