ভাঙন থামছে না রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের
ভাঙন যেন থামছেই না রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গোদার বাজার এলাকার পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের।
গত ২৬ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪৫৮ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীতে ধসে গেছে। এর পাশাপাশি ওই এলাকায় বসবাসরত ৩০ থেকে ৪০টি বসতবাড়ি ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে যশোর সেনানিবাসের ৫৫ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক নির্মিত অবকাশ কেন্দ্র ‘বন্ধন’এবং এনজিএল ইটভাটা। সবশেষ গতকাল ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে চরধুনচী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ। ভাঙন আতঙ্কে স্কুলের পাঠদানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সরঞ্জমাদি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মিজানপুর ইউনিয়নের চরসিলিমপুর ও মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়সহ ওই এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। নদী তীরের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে আর ভাঙন রোধে কোনো রকম বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত মাসের ২৬ আগস্ট থেকে শুরু করে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ফেইজ-১ এর কাজের ৬ বারে ৪৫৮ মিটার এলাকা সিসি ব্লকসহ নদী গর্ভে চলে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে ৪টি ধাপের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যাতে প্রায় ১২ হাজারের অধিক বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙন স্থানে ফেলেছে। এছাড়া চরসিলিমপুরে ফেইজ-২ এর কাজ শুরু হবে। এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, ২৬ আগস্ট রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের গোদার বাজার এলাকার পদ্মা নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার, ৫ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে ৪৬ ও ৬৯ মিটার, ৯ সেপ্টেম্বর ১৩৮ মিটার, ১৪ সেপ্টেম্বর ১০০ মিটার ও সবশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর ৫৫ মিটার এলাকার তীর রক্ষা বাঁধ ধসে গেছে। এছাড়া জেলার পাংশা হাবাসপুর, কালুখালীর রতনদিয়া, গোয়ালন্দের ছোটভাকলা, দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়াতে ভাঙনের কবলে রয়েছে।
চরসিলিমপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, আজ দুই মাস ধরে নদীতে ওই এলাকা ভাঙলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে কিছু বালুর বস্তা ফেলেছেন কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। অনেকস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এখনই বালুর বস্তা না ফেললে অনেকের বাড়ি নদী গর্ভে চলে যাবে। একটি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে হুমকির, যার থেকে নদী মাত্র তিন-চার ফুট দূরে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের স্কুলের পাশ দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে গেছে। এখন যেভাবে ভাঙছে তাতে তারা স্কুলে আসতে খুব ভয় পাচ্ছে। স্কুলটি ভাঙন রোধে সরকারসহ সবার কাছে অনুরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।
চরসিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইমান আলী ফকির জানান, পড়াশুনার মান উন্নয়নে তারা চেষ্টা করছেন। নদী ভাঙন আতঙ্কে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ভয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না অভিবাবক এবং তারাও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। এখানে ভাঙন রোধে আরও কাজের প্রয়োজন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.হাফিজুর রহমান জানান, গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প ফেইজ ১ এর ৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জনগণ ও তাদের ধারণা বিআইডাব্লিউটিএ নদীতে ড্রেজিং করায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের ফেইজ ১ এর কাজ হয়। ২০১২ সাল থেকে আজ ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো ভাঙন ছিল না কিন্তু এখন যেভাবে ভাঙছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে ড্রেজিংয়ের কারণে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে যে সব স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে সেসব স্থানে তারা ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের কাজ করছেন।
রুবেলুর রহমান/আরএ/পিআর