পদ্মার ভাঙনে গৃহহীন আরও ৬০ পরিবার
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তবে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও স্রোত কম থাকায় ভাঙনের তীব্রতা কমেছে। আবার পানি কমতে শুরু করলে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে বলে স্থানীয়রা জানান।
রোববার ও সোমবারের ভাঙনে শুভগ্রাম, বাঁশতলা, দাস পাড়া, পূর্ব নড়িয়া ও উত্তর কেদারপুর গ্রামের ৬০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে পদ্মার ভাঙনে নড়িয়ার তিনটি ইউনিয়নে ও পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে প্রায় ছয় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। কয়েক হাজার একর কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি প্রশাসন ।
এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তিনটি খনন যন্ত্র দিয়ে সোমবার থেকে নড়িয়ায় চর কেটে নদী খননের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত খনন কাজের জন্য এসে পৌঁছায়নি ড্রেজার। ড্রেজার দিয়ে চর খনন করে পদ্মার স্রোত দক্ষিণ তীর হতে মাঝে নেয়া হবে। যাতে করে দক্ষিণ তীরের ভাঙন কমে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর ৩৯ কিলোমিটার তীর রয়েছে। এর মধ্যে নড়িয়ার মোক্তারেরচর, কেদারপুর, ঘড়িসার ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভা, জাজিরার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙনে এবার ৮ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। গত পাঁচ বছরে গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। এই এলাকার মধ্যে নড়িয়ার সুরেশ্বর এলাকায় ১ কিলোমিটার লম্বা বাঁধ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে বাঁধটির ৫০ মিটার নদীতে বিলীন হয়। এ বছর কয়েক হাজার কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্তরা বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। বাজারের পাকা দোকানগুলো নিজেদের উদ্যোগে ভেঙে ইট ও রড সড়িয়ে নিচ্ছেন। তবে এখনও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়নি ভাঙন কবলিতদের। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা। না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে অনেক পরিবার।
বাঁশতলা গ্রামের মনির হোসেন ও দাসপাড়া গ্রামের শুবাত্রা রানী পাল বলেন, নদীতে প্রথমে আমাদের ফসলি যায়। পরে বাড়িগুলো যখন ভাঙতে শুরু করে তখন সকল মালামাল ও আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু ইট তৈরি ঘর সরাতে না পারায় তা নদীগর্ভে চলে গেছে। ফসলি জমি, বসতঘর হারিয়ে না খেয়ে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করতে হচ্ছে আমাদের। থাকা-খাওয়ার জন্য যদি একটি আশ্রয় পেতাম ভালো হতো।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইসলাম বলেন, ভাঙন কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। আর পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে টিন ও নগদ টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ছগির হোসেন/আরএআর/এমএস